আজকাল ওয়েবডেস্ক: আসামের কাছাড় জেলার সিলচরে এক ব্যক্তির গোপনাঙ্গ কেটে ফেলার অভিযোগে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মণিপুরের জিরিবাম জেলার বাসিন্দা ২৮ বছরের আতিকুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি প্রাথমিকভাবে গোপনাঙ্গে সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য সিলচরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসক তাঁকে বায়োপসি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই প্রক্রিয়ার নামে, তাঁর অজান্তে এবং সম্মতি ছাড়াই, গোপনাঙ্গ সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। আতিকুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯ জুন তিনি সিলচরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। ডা. সিংহ তাঁকে জানান যে, সংক্রমণের কারণ নির্ণয় করতে একটি ছোট্ট টিস্যু স্যাম্পল নেওয়া হবে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরে এসে আতিকুর দেখেন, তাঁর গোপনাঙ্গ সম্পূর্ণভাবে কেটে ফেলা হয়েছে। "যখন ড্রেসিং খুলে দেখি, আমার ব্যক্তিগত অঙ্গ নেই, আমি স্তব্ধ হয়ে যাই," অভিযোগ করেন তিনি। ক্ষোভে রে রে করে তেরেও যান চিকিৎসক সহ হাসপাতাল কর্মীদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ অনুযায়ী, অস্ত্রোপচারের পরে যখন তিনি চিকিৎসকের কাছে ব্যাখ্যা চান, কোনও সন্তোষজনক উত্তর পাননি। এরপর বহুবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও চিকিৎসক কোনও উত্তর দেননি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের প্রশাসনও তাঁকে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাধা দেয়। হতাশ ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া আতিকুর বলেন, "আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। আমি জানি না এখন কী করব। আমি মানসিক কষ্টে আছি এবং অস্ত্রোপচারের কারণে শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি।" হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত চিকিৎসকও গা ঢাকা দিয়েছেন এবং ফোন বা মেসেজের কোনও উত্তর দিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: ৮০ বছর বয়সে এসেও নিজের কামান বার করে দেখালেন মুক্তিযোদ্ধা জেড আই খান পান্না! জাহির করলেন দেশপ্রেম
এই পরিস্থিতিতে আতিকুর সরাসরি আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তিনি ইতিমধ্যেই পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং দোষী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকের খোঁজ চলছে। চিকিৎসায় গাফিলতি বা চিকিৎসা অবহেলা এমন এক গুরুতর সমস্যা, যা রোগীর জীবন ও স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি ঘটে যখন একজন চিকিৎসক, নার্স বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মানদণ্ড ও সতর্কতা মেনে চলেন না। যেমন—ভুল রোগ নির্ণয়, অপারেশনে ভুল কৌশল প্রয়োগ, ওষুধের ভুল মাত্রা, কিংবা রোগীর অনুমতি ছাড়াই বড় ধরনের শল্যচিকিৎসা করা—সবই চিকিৎসায় গাফিলতির উদাহরণ।
এই ধরনের অবহেলার ফলে রোগীর শারীরিক জটিলতা, অঙ্গহানি, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। আইন অনুযায়ী, চিকিৎসা অবহেলা প্রমাণিত হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং ক্ষতিপূরণের দাবি করা যায়। আধুনিক চিকিৎসায় ‘ইনফর্মড কনসেন্ট’ বা রোগীর সম্মতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; চিকিৎসার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে রোগীকে স্পষ্টভাবে জানানো চিকিৎসকের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব। চিকিৎসায় গাফিলতি রোধে হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত মান নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং রোগী-চিকিৎসক স্বচ্ছ যোগাযোগ অপরিহার্য। একইসাথে, রোগীদেরও সচেতন থাকা দরকার—চিকিৎসা শুরুর আগে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া ও নথিভুক্ত সম্মতি প্রদান নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা পেশা মানবসেবার প্রতীক হলেও, গাফিলতি সেই আস্থাকে নষ্ট করে এবং সমগ্র স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়।
