আজকাল ওয়েবডেস্ক: টানা প্রবল বর্ষণ, আকস্মিক মেঘভাঙা ও ভয়াবহ ভূমিধসের ফলে জম্মু-কাশ্মীরে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জম্মু অঞ্চলের তিনটি ভয়াবহ ঘটনায় ৩৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষত বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের পথে ভূমিধসে একাই প্রাণ হারান ৩২ জন যাত্রী ও তীর্থযাত্রী। বুধবারও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা আরও মানুষের সন্ধানে উদ্ধারকার্য চলছিল। টানা বৃষ্টির ফলে টেলিকম ফাইবার তার ভেসে যাওয়ায় মঙ্গলবার থেকে পুরো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলজুড়ে ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এক দিনের বেশি সময় পর বুধবার আংশিকভাবে মোবাইল ফোন পরিষেবা চালু হয়। তবে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়।
জম্মু আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জম্মুতে রেকর্ড ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ১৯১০ সালে সেখানে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু হওয়ার পর সর্বাধিক। ফলে তীর্থযাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ রাখতে হয়। কাত্রা থেকে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের মাঝামাঝি স্থানে ধস নেমে বহু মানুষ আহত হন। আহত কমপক্ষে ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে জম্মুর তাওয়ি নদী বিপদসীমার উপরে বইতে থাকায় অন্তত ৫,০০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু জম্মু জেলা থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে ৩,৫০০-রও বেশি মানুষকে। বন্যায় ভেসে গেছে একাধিক সেতু, ভেঙে পড়েছে রাস্তাঘাট। ভগবতী নগরের তাওয়ি নদীর সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একটি গাড়ি ঝুলন্ত অবস্থায় আটকে পড়ে—যা দেখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।
বৃষ্টির জেরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পানীয় জলের ঘাটতি, বিমান ও ট্রেন পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটেছে। জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ ছিল ভূমিধস ও “শুটিং স্টোন” পড়ার কারণে। চেনাব ভ্যালির ডোডা ও কিশতওয়ার জেলায় ঘরবাড়ি ও দোকান ভেঙে পড়েছে, সেতু ভেসে গেছে, প্রাণ হারিয়েছেন আরও কয়েকজন। কাশ্মীর উপত্যকাতেও অবস্থা ভয়াবহ। শ্রীনগর ও আশপাশের এলাকায় জল জমে রাস্তাঘাট অচল হয়ে পড়ে। অনেক মানুষকে পুলিশ ও প্রশাসন কাঁধে করে উদ্ধার করেছে। অনন্তনাগ জেলায় জলমগ্ন দোকান থেকে মালপত্র বার করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। পাহালগাঁও-এ লিদ্দার নদীর জলের স্তর ৬.০২ ফুট ছুঁয়ে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে, ফলে নদীর তীর ভেঙে পড়েছে একাধিক স্থানে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবারও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে এবং নির্ধারিত সমস্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। উদ্ধারকার্যের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পাশে দাঁড়াতে উপ-রাজ্যপাল মনোজ সিংহ বৈষ্ণোদেবী দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ৯ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছেন। তিনি হাসপাতাল গিয়ে আহতদের সঙ্গেও কথা বলেন। অন্যদিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা অতীতের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ তুলে প্রশ্ন তুলেছেন, ২০১৪ সালের বিধ্বংসী বন্যার পর গত ১১ বছরে কেন্দ্র কী কী সংশোধনী পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্যদিকে শ্রীনগর পুলিশ নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে এবং জরুরি নম্বর প্রচার করেছে। তারা জানিয়েছে, “বৃষ্টির সময় অযথা বাইরে বের হবেন না, জলের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ বা গাছ পড়ে থাকলে পুলিশকে খবর দিন।” অতিবৃষ্টির জেরে জম্মু-কাশ্মীরের জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। তবে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঝারি ও হালকা বৃষ্টি চলতে পারে। ফলে এখনও বিপদ কাটেনি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
