আজকাল ওয়েবডেস্ক: আদিবাসী প্রৌঢ়ার মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধার হয়েছিল দিন কয়েক আগে। যা ঘিরেই তুমুল উত্তেজনা ছড়াল দুই গ্রামে। বাঙালি গ্রামে পরপর বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আদিবাসীদের বিরুদ্ধে। দুই গ্রামের সংঘর্ষের জেরে ফের উত্তপ্ত পরিস্থিতি ওড়িশায়। মঙ্গলবার বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবাও। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা, গত ২ ডিসেম্বর পোতেরু নদী থেকে পদিয়ামি (৫৫) নামের এক আদিবাসী প্রৌঢ়ার মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধার করা হয়। রাখেলগুড়া গ্রামের কোয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। সেই নদীর পাশেই রয়েছে সুকুমার মণ্ডল নামে এক বাঙালি কৃষকের জমি। আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পদিয়ামিকে অপহরণ করে খুন করেছেন সুকুমার ও তাঁর পরিচিতরা। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সুকুমারের সঙ্গে পদিয়ামির মনোমালিন্য ছিল। সেই কারণেই তাঁকে খুন করেছেন। 

যদিও আদিবাসী প্রৌঢ়াকে খুনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন সুকুমার মণ্ডল। গত রবিবার ওই বাঙালি গ্রামে হামলা চালায় আদিবাসীরা। পরপর বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পুড়ে খাক হয়ে যায় গোটা গ্রামের অধিকাংশের বেশি বাড়ি। বাঙালিরাও আতঙ্কে ঘরছাড়া। মালকানগিরির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিনোদ পাটিল জানিয়েছেন, অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শুভরঞ্জন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। 

সোমবার সন্ধ্যায় ওড়িশার সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টা মালকানগিরি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ভুয়ো খবর ছড়ানো ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য। ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে এই জেলায়। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রবিবারের পর সোমবারেও মালকানগিরির এমভি-২৬ গ্রামে আদিবাসীরা আবারও হামলা চালায়। আরও একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর করে, আগুন জ্বালিয়ে দেয়।‌ আতঙ্কেই ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বাঙালিরা। এই গ্রামেই কার্ফু জারি করেছে প্রশাসন। 

সূত্রের খবর, রাখেলগুড়া গ্রামের অসংখ্য আদিবাসী মহিলা ও পুরুষ মিলে রবিবার সন্ধ্যায় এমভি-২৬ এলাকায় হামলা করে। এই এলাকায় অধিকাংশই বাঙালি বাসিন্দা। কমপক্ষে ৫০টি বাড়িতে জ্বালিয়ে দেয় তারা। বাঙালিদের বাড়িতেও ভাঙচুর করে। রবিবারের পর সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশের উপস্থিতিও হামলা করে আদিবাসীরা। কমপক্ষে পাঁচ হাজার আদিবাসী বাসিন্দা হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। 

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত আদিবাসী মহিলার মুণ্ডু এখনও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাঙালি বাসিন্দারাও কালেক্টর অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গোটা এলাকায় দমকল বাহিনী, বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।