আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভোটের ফলাফল ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। তারপর দিনকয়েক পেরিয়ে গেলেও, মহারাষ্ট্রে বহাল জোটের জট। মুখ্যমন্ত্রীর কুরশি কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়েই দফায় দফায় আলোচনা। ইতিমধ্যে ‘বিহার মডেল’ সাফ খারিজ করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। সোমবার নরেশ মাশকে বলেছিলেন, বিহার মডেলের কথা। তাঁর বক্তব্য ছিল, বিহারে যে অঙ্কে মুখ্যমন্ত্রীর কুরশিতে নীতিশ, সেই অঙ্কে মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী হবেন একনাথ শিন্ডে। এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, শিবেসেনা শিন্ডে-শিবিরের আশা ছিলই, মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরছেন একনাথ শিন্ডেই। সঞ্জয় শিরসাতও বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফিরবেন একনাথ শিন্ডেই। শিন্ডে শিবিরের নেতাদের একের পর এক মন্তব্য ঘিরেই জোর চর্চা রাজনীতির ময়দানে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শিন্ডে শিবির আর যাই হোক, কোনও ভাবেই শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদের জন্য রাজি নয়। অর্থাৎ অজিত পাওয়ারের এনসিপির মতো নমনীয় কোনও মনোভাব নেই তাদের। 

কী বলছেন খোদ একনাথ শিন্ডে? মহারাষ্ট্রে গেরুয়া শিবিরের এই বিপুল জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি, এমনকি মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বালাসাহেবের শিবসেনার উত্তরসূরি একনাথ বলছেন, পরিবারের প্রধান হিসেবে নরেন্দ্র মোদির সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। মোদি যা বলছেন, তাই মেনে নেবেন তিনি। এখন অপেক্ষা মোদি-বার্তার। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর কুরশি নিয়ে চর্চার মাঝেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে একনাথ শিন্ডে জানিয়েছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলেছি, আমি কোনও সমস্যা বা বাধা হয়ে দাঁড়াব না। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা তাই মেনে নেব।‘ 

শিন্ডের এই বার্তাই যেন একপ্রকার সিলমোহর দিল জোটের জট নিয়ে, ওয়াকিবহাল মহলের মত তেমনটাই। রাজনীতিতে এই চর্চা না থামার কারণ কী?  জোটের সরকার এর আগেও তৈরি হয়েছে। শরিক দলগুলির সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রী হন একজন। কিন্তু তারপরেও গত কয়েকবছর ধরে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি লক্ষ করলেই বোঝা যাবে, কেন চর্চা? বারবার পালাবদল ঘটেছে সে রাজ্যে। প্রথমে বালা সাহেবের শিবসেনায় ভাঙন এবং তার পরেই শরদ পাওয়ারের এনসিপি-তে ভাঙন। শিবসেনার ভাঙনই মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে পালাবদল ঘটিয়েছিল মূলত। যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়ায় এবং শিবসেনা তাদের মূল আদর্শ  থেকে সরে যাচ্ছে, এই বক্তব্যে দলে ভাঙন ঘটিয়ে একগুচ্ছ বিধায়কদের নিয়ে একনাথ শিন্ডে আলাদা হয়েছিলেন বলেই, মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছিল গেরুয়া শিবির। রাজনীতির মারপ্যাঁচের মাঝে দাঁড়িয়ে মহারাষ্ট্রের এক সময়ের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র সেই আসন ছেড়েছিলেন শিন্ডেকে। উপমুখ্যমন্ত্রী হন নিয়ে। পরে অজিত পাওয়ার কাকার হাত ছেড়ে বিজেপি ঘনিষ্ঠ হতেই তঁকেও দেওয়া হয় উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদ।


কিন্তু এবার? এবার কোনও দল ভাঙিয়ে নয়, আস্থা ভোটেও নয়, বিধানসভা ভোট জিতছে বিজেপি চালিত এনডিএ জোট এবং তাতে বড় ভূমিকা একনাথ শিন্ডে এবং তাঁর শিবসেনা শিবিরের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আগেই বলেছিলেন, মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বিজেপির কাছে ভোট জেতার থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ, মুখ্যমন্ত্রীর পদে কাকে বসাবেন সেটা। একনাথ শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ না দিলে, তিনি কি ফিরে যাবেন আবার শিবসেনায়? সেটা যেমন বড় প্রশ্ন, তেমন   দেবেন্দ্র ফড়নবিশ কি এবারও দলের কথা ভেবে মেনে নেবেন উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ? নাকি কুরশি না পেলে, বিক্ষোভ হবে দলের ভেতরেই? প্রশ্ন তা নিয়েও।