আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি নিয়ে মোদি সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে 'পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক' যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে কংগ্রেস নেতারা ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭১ সালের দৃঢ় নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে কটাক্ষ করেছেন। যা নিয়েই দেশের রাজনীতি বেশ সরগরম। এই পরিস্থিতিতে পাল্টা জবাব দিতে বিজেপির হয়ে মাঠে নেমেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় নেওয়া ইন্দিরা গান্ধী সরকারের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হিমন্ত। বিশেষ করে 'চিকেন নেক' করিডোর এবং যুদ্ধোত্তর আলোচনা পরিচালনায় ইন্দিরার ইচ্ছে নিয়ে সোচ্চার হযেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী।

মঙ্গলবার হিমন্ত বিশ্বা শর্মা বলেছেন যে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বেঁচে থাকলে তিনি তাঁকে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় নেওয়া কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলি সম্পর্কে, বিশেষ করে 'চিকেন নেক' করিডোর এবং যুদ্ধোত্তর আলোচনা পরিচালনা সম্পর্কে। 

গুয়াহাটির বাজপেয়ী ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ বৈঠেক অসমের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "বাংলাদেশ তৈরির লাভ কী হল?" তিনি বলেন, "আমাদের সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। আজ যদি ইন্দিরা গান্ধী বেঁচে থাকতেন, তাহলে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতাম- কেন তিনি একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের অনুমতি দিয়েছিলেন। কেন তিনি সিমলা চুক্তিতে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) ফিরিয়ে নেননি? কেন তিনি আরও ১০০ মাইল চিকেন নেক করিডোর সম্প্রসারণ করেননি?" 

হিমন্তের অভিযোগ, "আপনি চিকেন নেক নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেননি। চাইলেই আপনি এটিকে একটি সঠিক চালনা করতে পারতেন। পরিবর্তে, আজ আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে।"  

ইন্দিরার প্রতি আক্রমণ অব্যাহত রেখে ণুক্যমন্ত্রী শর্মা বলেনছেন, "আপনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইচ্ছাকে ধর্মনিরপেক্ষ নেতা হওয়ার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরিত করেছেন। তারা ছিল একটি আত্মসমর্পণকারী জাতি। আপনি পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরত এবং চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশাধিকার দাবি করতেই পারতেন, কিন্তু করলেন না। কেন?" 

রবিবার, চার দিনের সামরিক যুদ্ধবিরতিতে ভারত ও পাকিস্তান একমত হওয়ার পরপরই দিল্লিতে কংগ্রেস সদর দপ্তরের বাইরে "ইন্দিরা হোনা আসন্ন নহি" এবং "ইন্ডিয়া মিসেস ইন্দিরা" এর মতো স্লোগান সম্বলিত পোস্টার প্রদর্শন করা হয়েছিল। শনিবার, কংগ্রেস নেতা কেসি ভেনুগোপাল ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন। কংগ্রেস নেতা পবন খেরা এক্স-এ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, "ভারত ইন্দিরাকে মিস করে।"

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে মিঃ শর্মা বলেন, পহেলগাঁওতে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালানো অপারেশন সিঁদুরের উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ককে শাস্তি দেওয়া এবং জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা। যা সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছিল। 

হিমন্ত বিশ্বশর্মার প্রশ্ন, "পাকিস্তান যখন বুঝতে পারল যে তাদের ধ্বংস করা হবে, তখন তারা আমাদের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। এখন কংগ্রেসকে বলতে হবে যে, পাকিস্তান পিছু হটার পরেও কি ভারত সরকার যুদ্ধ চালিয়ে যেত?" 

এরপর মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেন, "ভারতে বারবার সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার। কিন্তু তা প্রতিহত করতে কংগ্রেস শাসনকালে কী করেছিল? আজ তাঁরা মোদীজির সমালোচনা করে, কিন্তু তিনিই বালাকোট, পুলওয়ামা এবং এখন পহেলগাঁওতে ভারতের দৃঢ় সংকল্প দেখিয়েছেন। কংগ্রেসের উচিত অন্যদের সমালোচনা না করে আত্মসমালোচনা করা।"