আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগ তাঁর তিন বছরের মেয়াদকালের যবনিকা পতন করল। তাঁর এই মেয়াদ ছিল বিতর্কিত। বেশ কয়েকবার ‘লক্ষ্মণরেখা’ পার করেছেন তিনি। 

তাঁর পদত্যাগের পর নানা তত্ত্ব খাঁড়া করা হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হল নগদকাণ্ডে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশোবন্ত বর্মাকে ইমপিচ করার জন্য বিরোধীদের প্রস্তাব। রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন ধনখড় সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। শাসকদল বিজেপিরও প্রায় একই রকম প্রস্তাব পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু বিরোধীদের প্রস্তাব গ্রহণ করে নেওয়ায় রাজ্যসভায় সুবিধাজনক স্থান হারিয়ে ফেলে বিজেপি।

এছাড়াও নানা পদের দায়িত্ব সামলানোর সময় সে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে থেকে শাসক দলের সঙ্গে এবং দেশের উপরাষ্ট্রপতির পদ তথা রাজ্যসভার চেয়াপার্সন হয়ে বিরোধীদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন বার বার। 

জগদীপ ধনখড় এবং রাঘব চাড্ডা

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাজ্যসভার বিশেষাধিকার কমিটি আম আদমি পার্টির সাংসদ রাঘব চাড্ডার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নে। রাঘব সংসদের নিয়ম না মানার জন্য সেই বছরের ১১ আগস্ট থেকে বরখাস্ত ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিলে। ধনখড়ের বরখাস্তের নির্দেশ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারকে বিরক্ত করে। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল রাঘবের ১১৪ দিনের বরখাস্তের মেয়াদ 'যথেষ্ট শাস্তি' হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব পাস হওয়ার আগে ধনখড় সংসদে বলেছিলেন যে কমিটি উভয় ক্ষেত্রেই আপ নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। রাঘবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিতর্কিত দিল্লি পরিষেবা বিল বিবেচনা করার জন্য একটি সিলেক্ট কমিটি প্রস্তাব করেছিলেন এবং সম্মতি ছাড়াই চারজন সাংসদের নাম ঘোষণা করেছিলেন।

আবার রাঘব চাড্ডা

মধ্য দিল্লিতে সংসদ হিসেবে রাঘবের জন্য বরাদ্দ বাংলো বিষয়টিও রয়েছে। প্রথমবারের সাংসদ ওই আপ নেতাকে তাঁর মর্যাদার চেয়ে এক স্তর উপরে একটি বাংলো দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যখন বরাদ্দ বাতিল করা হয়, তখন সাংসদ বাড়ি খালি করতে অস্বীকার করেন এবং দিল্লি হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন। এর আগে একটি ট্রায়াল কোর্ট আপ নেতাকে বাংলো ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাজ্যসভা সচিবালয়কে রাঘবকে উচ্ছেদ করা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। বিষয়টি এখনও আদালতে বিচারাধীন।

ধনখড় এবং বিরোধী দল

উপরাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন বিরোধীদের সঙ্গে প্রায়শই বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন ধনখড়। সংসদে বক্তব্য রাখার সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। গত বছর অনাস্থা প্রস্তাব আনার সময় থেকেই এই অভিযোগের উত্থান।

আরও পড়ুন: আমেরিকার পরমাণু অস্ত্রের ৩৬০০ ফাইল চুরি, অভিযুক্ত চিনা ইঞ্জিনিয়ার, বড়সড় ক্ষতি হল ট্রাম্পের!

এর পর থেকেই তাঁর অবস্থানে পরিবর্তন আসে। কেন্দ্র তাঁর কার্যকলাপ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। যার ফলে এখন বিরোধী নেতারা আরও বেশি কণ্ঠস্বর প্রকাশ করতে পারছেন। সোমবার অপারেশন সিঁদুর নিয়ে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে বিজেপিকে আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন ধনখড়। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রমণটি নিজে থেকেই বাতিল হয়ে যেত। কিন্তু সরকার আনুষ্ঠানিক বিতর্কের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করা সত্ত্বেও ধনখড় এটি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি ভাল চোখে দেখেনি কেন্দ্র।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার সময় ধনখড়ের বলেছিলেন যে তিনি বিজেপি-সহ বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন। এই বক্তব্যে সরকার অসন্তুষ্ট ছিল। এর ফলে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা আনুষ্ঠানিকভাবে উপরাষ্ট্রপতির বিরোধিতা করেন। যা সরকারের জন্য ভাল চিত্র নয়।

ধনখড় এবং কৃষক আন্দোলন

২০২০ সালের আগস্ট থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে কৃষকদের বিক্ষোভ চলছেই। এই বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করেছিলেন ধনখড়। সেই সমালোচনা ভালভাবে গ্রহণ করা হয়নি। 

আরও পড়ুন: গালাগালি ছাড়া কথা বলেন না কেউ, ভারতের এই রাজ্যের মানুষের মুখের ভাষা সবচেয়ে খারাপ

ডিসেম্বরে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ চৌহানের কাছে তীব্র প্রশ্ন তোলেন, "আমি আপনাকে অনুরোধ করছি দয়া করে বলুন, কৃষকদের কাছে কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল? কেন প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি? গত বছর একটি আন্দোলন হয়েছিল... এই বছরও একটি আন্দোলন চলছে। সময়ের চাকা ঘুরছে..."

কৃষি পরিবারে বেড়ে ওঠা ধনখড় সারের জন্য সরাসরি নগদ ভর্তুকির জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং সাংসদদের মতো মুদ্রাস্ফীতিকে আর্থিক সহায়তা হিসেবে বিবেচনা করতে চেয়েছিলেন।

ধনখড় এবং সুপ্রিম কোর্ট

এই মাসের শুরুতে বিচারপতি যশবন্ত বর্মা বিতর্কের জন্য বিচার বিভাগের উপর তীব্র আক্রমণ করেন ধনখড়। তিনি নগদ অর্থ উদ্ধারের জন্য ফৌজদারি তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানান।