আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ২০২৭ সালে অনুষ্ঠিত হতে চলা দেশের পরবর্তী জনগণনায় জাতিগত তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ১৯৩১ সালের পর এই প্রথম। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিতর্ক সামনে এসেছে — আদিবাসীদের ‘Other Religions and Persuasions’ (অন্য ধর্ম ও মতবাদ) বিভাগ থেকে সরিয়ে হিন্দুধর্মের অংশ হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব। জনগণনার সময় বহু আদিবাসী নাগরিকের ধর্ম ‘হিন্দু’ হিসেবে লেখা হয়, যদিও প্রশ্ন করা পর্যন্ত হয় না। এটি শুধুমাত্র এক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা নয় — সারা দেশের লক্ষ লক্ষ আদিবাসী এই ধরনের প্রশাসনিক অবজ্ঞার শিকার।

ভারতের সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ প্রত্যেক নাগরিককে নিজস্ব ধর্ম অনুসরণ ও প্রচারের অধিকার দেয়। তবুও, আদিবাসী ধর্ম ও সংস্কৃতিকে মূলধারার হিন্দুধর্মে মিশিয়ে দেওয়ার এক প্রকার রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে এই প্রস্তাবকে দেখা হচ্ছে। ঔপনিবেশিক যুগ থেকেই আদিবাসী ধর্মকে ‘অ্যানিমিজম’ বা ‘ট্রাইবাল রিলিজিয়ন’ নামে উপস্থাপন করা হয়েছে। ১৮৭১ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত আদিবাসীদের আলাদা ধর্মীয় পরিচয় দেওয়া হলেও, ১৯৫১ সালের পর থেকে ‘ট্রাইবাল রিলিজিয়ন’ বিভাগ বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে আদিবাসীরা ‘Other Religions’ বিভাগে নিজেদের ধর্ম চিহ্নিত করে আসছেন।

বিশেষ করে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশে ‘সর্ণা ধর্ম’ আন্দোলনের মাধ্যমে আদিবাসীরা তাদের স্বতন্ত্র ধর্মীয় পরিচয় রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৯১ সালে যেখানে ১৮ লক্ষ মানুষ সর্ণা ধর্মের পরিচয় দিয়েছিলেন, ২০১১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ লক্ষে। জনগণনায় ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য অস্বীকার করা হলে, তা আদিবাসী সমাজের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অবস্থানকে নস্যাৎ করার সামিল হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা ও সমাজকর্মীরা।