আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের হিমাচল প্রদেশে ভারী বর্ষণে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। প্রবল বৃষ্টিপাত ও মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে সিমলা এবং লাহৌল ও স্পিতি জেলার একাধিক রাস্তা বন্ধ ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশপাশি বেশ কয়েকটি সেতু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরো রাজ্য জুড়ে অন্তত ৩২৫টি রাস্তা, যার মধ্যে দুটি জাতীয় সড়ক রয়েছে, তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মান্ডি জেলায় ১৭৯টি এবং কুল্লু জেলায় ৭১টি রাস্তা অচল হয়ে পড়েছে।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্র অনুযায়ী, সিমলা জেলার গনভি রাভিন এলাকায় প্রবল বৃষ্টির ফলে একটি পুলিশ পোস্ট ভেসে গিয়েছে। এছাড়া, সিমলা শহরের একটি বাস স্ট্যান্ড ধসে পড়েছে। এমনকি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে কুট ও কিয়াভ পঞ্চায়েত এলাকার সঙ্গে সংযোগকারী দুটি সেতু ধ্বংস হওয়ায় ওই এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, লাহৌল ও স্পিতি জেলার মায়াদ উপত্যকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে হঠাৎ করে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কারপাত, চাংগুট এবং উদগোস নালার মতো এলাকায় দু’টি সেতু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ঘটনার জেরে কারপাত গ্রামে পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠেছে। ফলে এলাকার মানুষজন আগেভাগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রণজিৎ লাহৌলির বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁর প্রায় দশ বিঘা কৃষিজমি জলে ডুবে গিয়েছে।

বৃষ্টি-জনিত কারণে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন চরম ব্যাহত হচ্ছে। বুধবার সকালে সিমলার টল্যান্ড সংলগ্ন সার্কুলার রোডে একটি গাছ পড়ে যাওয়ায় সেখানকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে বাস চলাচল ব্যাহত হয়, যার ফলে স্কুল শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষজনকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

ঘটনার জেরে হিমাচল প্রদেশ রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, এনএইচ-৩০৫ (অট-সাইনজ) ও এনএইচ-৫০৫ (খাব থেকে গ্রামফু) সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এখনও বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার চাম্বা, কাংগ্রা ও মান্ডি জেলার কিছু অংশে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত চার থেকে ছয়টি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ নীরব ভালবাসা! প্রতিদিন তিনশো'র বেশি পথকুকুর কে খাওয়ান, গোয়ার 'মারিয়া আন্টি' মন জয় করলেন... 

বর্তমানে বিপর্যস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ কার্যক্রম জোরকদমে চালানো হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রশাসন ও দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী স্থানীয় মানুষদের সহায়তা করতে এবং যোগাযোগব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সংবাদমাধ্যম সূত্রে, ২০ জুন থেকে ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে, মোট ৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৫৭ জন বৃষ্টিপাতজনিত ঘটনায় এবং ৪১ জন সড়ক দুর্ঘটনায়। আরও ১৭৮ জন আহত হয়েছেন। বর্ষায় ৩৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৩১টি আকস্মিক বন্যা, ২২টি ক্লাউডবার্স্ট এবং ১৮টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সিরমৌর জেলার রাজগড়ে ৭২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। খাদ্রালা (৪২.৪ মিমি), পাছাদ (৩৮ মিমি), মান্ডি (২৬.৪ মিমি), ভুন্টার (২২ মিমি), শিলারু (১৪.২ মিমি), সেওবাগ (১২.২ মিমি), শিমলা (১১.৫ মিমি) এবং রোহরু (১০ মিমি)।

৩০ জুন থেকে ১ জুলাই রাতে মান্ডি জেলায় দশটি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে ধ্বংসযজ্ঞের পর নিখোঁজ হন ২৭ জন। খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।