আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইক, শেয়ার, কমেন্ট কুড়ানোর লোভ তাড়া করে বেড়ায় ইদানিং। আট থেকে আশি, জনপ্রিয় হয়ে ওঠার দৌড়ে সামিল অধিকাংশই। কেউ ছবি পোস্ট করেন, কেউ নানাধরনের ভিডিও বানান, কেউ আবার ঘনঘন রিল পোস্ট করেন। এই রিলের নেশাই হল সর্বনাশা। 

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠার জন্য নেটিজেনদের নজর কাড়তে চেয়েছিল এক কিশোর। তাই ট্রেনের উপরে উঠে রিল শুট করছিল। বন্ধুরা নীচে দাঁড়িয়ে দেখছিল তার কাণ্ডকারখানা। রিল শুটের মাঝে আচমকাই ঘটল বিপত্তি। চোখের সামনে বন্ধুর এমন পরিণতি দেখে শিউরে উঠেছে বাকিরা। 

 

ঠিক কী ঘটেছিল? ১৬ বছরের কিশোর ফিল্মি কায়দায় একটি রিল শুট করতে স্টেশনে পৌঁছয়।‌ বন্ধুদের দাঁড় করিয়ে সোজা উঠে যায় একটি ট্রেনের উপরে। সেখানে দাঁড়িয়ে হিন্দি গানে নাচতে নাচতে রিল শুট করছিল। হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে। মুহূর্তের মধ্যে ট্রেনের উপর থেকে ছিটকে পড়ে যায় নীচে। 

আরও পড়ুন: ট্রাকের উপরে বসেছিলেন, চালক নিয়ন্ত্রণ হারাতেই ছিটকে পড়লেন রাস্তায়, বস্তা চাপা পড়ে প্রাণ গেল ৯ শ্রমিকের

টানা কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল সে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয়েছে কিশোরের। তার মৃত্যুতে যেমন তাজ্জব বনে গেছেন সকলে, তেমনি রিলের নেশায় ভয়ঙ্কর পরিণতিতে আঁতকে উঠেছেন অনেকে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের নভি মুম্বইয়ে।‌ পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কিশোরের নাম, আরব শ্রীবাস্তব। সে বেলাপুরের বাসিন্দা ছিল। গত ৬ জুলাই বন্ধুদের সঙ্গে নভি মুম্বইয়ের নেরুল রেল স্টেশনে ঘুরতে যায়। রেল স্টেশনে গিয়েই রিল বানানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করে সে। 

 

সেই লাইনে একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। সেই ট্রেনের একটি বগির উপর উঠে পড়ে কিশোর। এর রিল বানাতে শুরু করে। রিল বানানোর সময় অসাবধানতাবশত ওভারহেডের তারে তার হাত লেগে যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে যায় সে। 

 

ভাসি গভর্মেন্ট রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরের বন্ধুদের চিৎকার শুনেই রেল পুলিশ তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিশোরকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতেই তাকে আইরোলির বার্নস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। 

 

টানা ছ'দিন সেই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল আরব নামের ওই কিশোর। অবশেষে শনিবার হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিশোরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ওভারহেডের তারে হাত ছুঁতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে। মাথায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশ অগ্নিদগ্ধ হয়। দুর্ঘটনায় কিশোরের মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত এখনও জারি রয়েছে। 

 

কিশোরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া তার পরিবারে।‌ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে তার বন্ধু, সহপাঠী ও শিক্ষকরাও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে রিলের নেশায় মেতেছিল কিশোর। প্রায়ই রিল বানাতে দেখা যেত তাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠার দৌড়ে সামিল হয়ে পড়েছিল। কীভাবে আরও লাইক, কমেন্ট পাওয়া যায়, তার জন্য নানা ধরনের অদ্ভুত রিল শুট করত। এই রিল বানানোর নেশাই প্রাণ কাড়ল কিশোরের। ঘটনায় স্তম্ভিত প্রতিবেশীরাও‌।