আজকাল ওয়েবডেস্ক: আলৌকিক নাকি অবহেলা? সরকারি হাসপাতালে জন্মানো নবজাতককে মৃত বলে ঘোষণা করেছিলেন চিকিৎসকরা। এরপর কেটে গিয়েছিল প্রায় ১২ ঘন্টা। মৃতদেহটি কবরে নিয়ে যাওয়ার সময়ই হঠাৎ নড়েচড়ে কেঁদে ওঠে। ফলে রক্ষা পেল সদ্যজাতটি। সরকারি হাসপাতালের অবহেলাকে দায়ী করেছেন সদ্যজাতর পরিবার। প্রতিক্রিয়া দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
অবিশ্বাস্য এই ঘটনাটি ঘটেছে, মহারাষ্ট্রের বীড জেলার অম্বাজোগাইয়ের স্বামী রামানন্দ তীর্থ সরকারি হাসপাতালে।
গত ৭ জুলাই রাতে হাসপাতালে এক মহিলা একটি শিশু প্রসব করেন। তবে, রাত ৮ টা নাগাদ চিকিৎসকরা নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর শিশুটির দাদা মৃতদেহটি কবরের জন্য তাঁদের গ্রামে নিয়ে যান। পরের দিন সকালে (৮ জুলাই), কবরের জন্য একটি গর্ত খননের তোড়জোড় চলছিল, কিন্তু কোদাল না মেলায় দেরি হয়। এরই মধ্যে, শিশুটির ঠাকুমা শেষবারের মতো মৃত শিশুটির মুখ দেখার জন্য জোর দেন। তখনই ঘটে যায় অবিশ্বাস্য ঘটনা। দেহের উপরের কাপড় সরানোর পরই সদ্যজাতহঠাৎ কাঁদতে শুরু করে।
এরপরই তড়িঘড়ি সদ্যজাতর পরিবার ফের হাসপাতালে যায়। শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। শিশুটিকে আগের দিন রাত ৮টা নাগাদ মৃত বলে ঘোষণার পর পর ১২ ঘন্টা অতিক্রান্ত হয়, তারপরের দিন সেটির শেষকৃত্যের প্রস্তুচি শুরু হয়। অর্থাৎ সদ্যজাতটিতে মৃত ঘোষণার প্রায় ১২ ঘন্টা পর শিশুটি কেঁদে ওঠে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, জন্মের পর নবজাতকটির জীবনের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি এবং চিকিৎসায় সাড়া দেয়নি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, স্বামী রামানন্দ তীর্থ হাসপাতালের ডিন রাজেশ কাচরে বলেন, "৭ জুলাই, একজন মহিলা হাসপাতালে আসেন। তাঁর গর্ভাবস্থার সময়কাল ছিল ২৭ সপ্তাহ। গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দেওয়ায় ৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় তাঁর প্রসব হয়। শিশুটির ওজন ছিল ৯০০ গ্রাম। শিশুটি দুর্বল এবং কম ওজনের ছিল, চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাধারণত যেভাবে জীবনের লক্ষণ ধরা পড়ে ওই শিশুর ক্ষেত্রে তা হয়নি। শিশুটি কোনও চিকিৎসায় সাড়া দেয়নি এবং তাই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরের দিন, পরিবার শিশুটির মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা লক্ষ্য করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। শিশুটিকে বর্তমানে ভর্তি করা হয়েছে। তবে কেন এই ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তের জন্য হাসপাতাল প্রশাসন দু'টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
নবজাতকের ঠাকুরদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করেছেন। সখারাম ঘুগে বলেন, "শিশুটি মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছে বলে আমি হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়েছিলাম। পরের দিন আমি শিশুটিকে নিতে গিয়েছিলাম। আমি কবরের জন্য একটি গর্ত খুঁড়ছিলাম, ঠিক তখনই আমার স্ত্রী বলল যে, সে শিশুটির মুখ দেখতে চায়। আমি যখন শিশুটির দেহের মুখের কাপড় সরিয়ে ফেলি, তখন শিশুটি জীবিত। এটা হাসপাতালের অবহেলা। এটা হওয়া উচিত নয়। যদি এমনটা ঘটে, তাহলে কে জানে কত জীবিত মানুষকে মৃত ঘোষণা করা হবে।"
সদ্যজাতর মা বালিকা ঘুগে বলেন, "নার্স বলেছিলেন আমার শিশুটি মৃত। কিন্তু আমরা যখন তাকে কবর দিতে যাচ্ছিলাম, তখন সে কাঁদতে শুরু করে।"
এখন পর্যন্ত, পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেনি, তবে উপস্থিত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করেছে। হাসপাতাল প্রশাসন ঘটনার পর অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
