আজকাল ওয়েবডেস্ক: আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার এক মাসের মাথায় এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো প্রকাশ করেছে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট। এরপরেই শনিবার অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডু জানিয়েছেন, ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার রিপোর্টটি প্রাথমিক স্তরের এবং চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমকে তাড়াহুড়ো করে কোনও সিদ্ধান্তে না পৌঁছানোর আর্জি জানিয়েছেন।
তদন্তটিকে ‘চ্যালেঞ্জিং’ বলে বর্ণনা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, "বেশ কিছু প্রযুক্তিগত বিষয় জড়িত এবং এই রিপোর্ট সম্পর্কে মন্তব্য করা এখনই ঠিক হবে না।“ নায়ডু আরও বলেন, “অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক এই রিপোর্টটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করছে। আমাদের এখনই যেন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো উচিৎ নয়। চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরেই আমরা একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব।"

রিপোর্টে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার পেছনে পাখির ধাক্কা কিংবা অন্তর্ঘাতের কোনও প্রমাণ মেলেনি। এমনকি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার তত্ত্বও একপ্রকার নস্যাৎ করে দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে, বিমানের দুই ইঞ্জিন একসঙ্গে ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ মোডে চলে যায়। কিন্তু তারপরেও কীভাবে আচমকা বিমানের দুই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে বড় প্রশ্ন। জানা গিয়েছে, ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার ঠিক আগে বিমানটি পৌঁছে গিয়েছিল সর্বোচ্চ গতিবেগে। এর পরপরই বন্ধ হয়ে যায় দুটি ইঞ্জিন।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পকে হাঁটু ধরাতে নয়া পরিকল্পনা পুতিনের, রাশিয়ার পদক্ষেপে লাভ হবে ভারতের!
ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে ককপিটে দুই পাইলটের কথোপকথন রেকর্ড হয়েছে ব্ল্যাক বক্সে। একজন বলতে শোনা গিয়েছে, ‘ইঞ্জিন বন্ধ করলে কেন?’ অপরজন উত্তর দেন, ‘আমি কিছু বন্ধ করিনি’। জানা গিয়েছে, ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে ব়্যাম এয়ার টার্বাইন চালু করা হয়েছিল, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ জোগান দেওয়া যায়। কিন্তু তাও যথেষ্ট কাজে আসেনি। জ্বালানির পরিমাণ পর্যাপ্ত ছিল এবং সরবরাহেও কোনও সমস্যা ছিল না বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্তর্ঘাতেরও কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে জ্বালানি সুইচে কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল কি না, তা এখনও তদন্তের আওতায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রাথমিক রিপোর্টে।
তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলের ড্রোন ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি সম্পন্ন হয়েছে। ধ্বংসাবশেষ স্থানান্তর করে বিমানবন্দরের কাছে একটি সুরক্ষিত স্থানে রাখা হয়েছে। উভয় ইঞ্জিন উদ্ধার করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। EAFR (Enhanced Airborne Flight Recorder) থেকে তথ্য ডাউনলোড করা হয়েছে এবং তা বিশ্লেষণাধীন। যাত্রী ও ক্রুদের ময়নাতদন্ত রিপোর্টও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মাথায় পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার দেনা নিয়ে কাটছে জীবন, চিনে নিন বিশ্বের দরিদ্রতম ব্যক্তিকে
গত ১২ জুন আহমেদাবাদ থেকে উড়ে যাওয়ার কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI 171। বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। আজ, ভারতীয় বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (Aircraft Accident Investigation Bureau বা AAIB) প্রকাশিত এক প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—টেক-অফের মুহূর্তে বিমানের দুইটি ইঞ্জিনই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২৪১ জন ছিলেন যাত্রী। শুধু এক ব্রিটিশ নাগরিক আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে গিয়েছেন।
