আজকাল ওয়েবডেস্ক: এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করলেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু। সোমবার রাজ্যসভায় এক উত্তাল অধিবেশনে দাঁড়িয়ে তিনি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে "নিজস্ব মত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা" করার অভিযোগ তোলেন। মন্ত্রী বলেন, "আমি দেখছি শুধু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নয়, পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমও নিজেদের মত ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তদন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে চলছে। Aircraft Accident Investigation Bureau (AAIB) দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হবে চূড়ান্ত রিপোর্টে।"
উল্লেখযোগ্যভাবে, দুর্ঘটনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬০ জন। এটি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের ঠিক তিন সেকেন্ড পর AI 171 নম্বর ফ্লাইটের উভয় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনও পরিষ্কার নয়, ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ হঠাৎ করে নাকি সচেতনভাবে অফ করা হয়েছিল।
প্রাথমিক রিপোর্টে পাইলটদের কথোপকথনের একটি অংশ উদ্ধৃত হয়েছে, যেখানে এক পাইলট অপরকে জিজ্ঞাসা করেন, "তুমি ফুয়েল কেটে দিলে কেন?" — জবাবে তিনি বলেন, "আমি দিইনি।" তবে পূর্ণ কথোপকথনের ট্রান্সক্রিপ্ট এখনো প্রকাশ পায়নি। এই অস্পষ্টতা ঘিরেই সামাজিক মাধ্যমে নানা জল্পনা ছড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই বিশৃঙ্খলা, বক্তব্য রাখতে না পেরে ক্ষুব্ধ রাহুল গান্ধী
‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর রিপোর্ট ও বিতর্ক
একটি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্টে, মার্কিন সরকারি আধিকারিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ব্ল্যাক বক্স রেকর্ডিং অনুযায়ী ক্যাপ্টেন নিজেই ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ বন্ধ করেন। এই দাবিকে ঘিরে বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী নাইডু বলেন, "আমরা সত্যের পাশেই থাকব। এখনই উপসংহার টানা উচিত নয়। পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমান ভিত্তিক খবর থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।" তদন্তের মাঝেই রাজ্যসভায় শুরু হয় বিক্ষোভ। বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে পাহেলগাম জঙ্গি হামলা ও প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির দাবি সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য দাবি করেন। এরপরই কংগ্রেস সাংসদরা বিক্ষোভ জানিয়ে রাজ্যসভা থেকে ওয়াকআউট করেন।
এই মুহূর্তে তদন্ত চলছে এবং সরকার আশ্বাস দিয়েছে, কোনও তথ্য আড়াল করা হবে না। দেশজুড়ে মানুষ চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষায়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে ২০২৫ সালের ১৪ জুলাই, যখন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI 171 আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উভয় ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় এবং বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহরতলির একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভেঙে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায় বিমানটিতে। ঘটনাস্থলেই মারা যান অধিকাংশ যাত্রী ও ক্রু সদস্য, পাশাপাশি মাটিতে থাকা বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাও হতাহত হন। স্থানীয় প্রশাসন, দমকল ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে, কিন্তু ততক্ষণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যায় আশঙ্কাজনকভাবে।
