আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরিচারিকাকে ধর্ষণের দায়ে বেঙ্গালুরুর একটি বিশেষ আদালতের নির্দেশে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা পেয়েছেন জনতা দল (সেকুলার) এর প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্না। ৪৮ বছর বয়সী মহিলার উপর যৌন নির্যাতনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়ার নাতিকে শুক্রবারই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। শনিবার সাদা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কীভাবে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন রেভান্না। কী  প্রমাণ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। উত্তর, একটি শাড়ি।

রেভান্নার গণিকাড়া খামারবাড়ির ছাদে লুকনো একটি শাড়ি এই মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। অভিযোগকারী, ৪৮ বছর বয়সী একজন মহিলা যিনি পরিচারিকার কাজ করতেন বলেছিলেন যে ২০২১ সালে হাসান ফার্ম হাউস এবং বেঙ্গালুরুতে রেভান্নার বাসভবনে তাঁকে দু’বার ধর্ষণ করা হয়েছিল। এমনকি রেভান্না তাঁর মোবাইলে গোটা ঘটনাটি রেকর্ড করেছিলেন বলেও অভিযোগ।

আরও পড়ুন: খারপ সময়ে সুখবর দিল টিসিএস, ৮০ শতাংশ কর্মীর বেতন বৃদ্ধি করবে সংস্থা, কে কত পাবেন জেনে নিন

তদন্তকারীদের মতে, ধর্ষণের পর, রেভান্না জোর করে নির্যাতিতার শাড়ি নিয়ে নেন এবং পোশাকটি নষ্ট করার পরিবর্তে তার খামারবাড়ির ছাদে লুকিয়ে রাখেন বলে অভিযোগ। ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই গুরুতর ভুলের কারণেই রেভান্নার বিরুদ্ধে মামলা গঠনে সুবিধা হয়।

তদন্তের সময়, নির্যাতিতা পুলিশকে বলেছিলেন যে রেভান্না তাঁকে অত্যাচারের পর তাঁর শাড়িটি আর ফেরত দেননি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে চিলেকোঠা থেকে শাড়িটি খুঁজে পায়। পরে ফরেন্সিক রিপোর্টে বীর্যের উপস্থিতি মেলে। ডিএনএ রিপোর্টে যা রেভান্নার সঙ্গে মিলে যায়।

কর্নাটক পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গত এপ্রিল মাসে প্রজ্বলের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল। তাতে পরিচারিকাকে জোর করে আটকে রেখে ধর্ষণ, সেই সময়ের ছবি ও ভিডিও তুলে রেখে পরে নির্যাতিতাকে হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে নানাবিধ অভিযোগ আনা হয়েছিল। গত ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল। শুক্রবার আদালত জানিয়েছিল, সিটের পেশ করা তথ্যপ্রমাণে প্রজ্বলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ আদালতের বিচারক সন্তোষ গজানন সাজা ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে ভারতের সবচেয়ে সুরক্ষিত শহরের তালিকার শীর্ষে ম্যাঙ্গালোর, দিল্লি কত নম্বরে

নির্যাতিতা মহিলার বয়স ৪৮ বছর। তিনি হোলেনারসিপুরায় রেভান্না পরিবারের মালিকানাধীন একটি বাগানবাড়িতে কাজ করতেন। অভিযোগ, তাঁকে দীর্ঘ দিন ধরে জোর করে আটকে রেখে একাধিক বার ধর্ষণ করেছেন প্রজ্জ্বল। প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০২১ সালে, করোনা অতিমারির সময়। শুধু হোলেনারসিপুরার বাগানবাড়িতেই নয়, বেঙ্গালুরুর বাসগৃহেও তাঁকে ধর্ষণ করেন প্রজ্বল। প্রতিটি ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করে রেখেছিলেন প্রজ্বল। নির্যাতিতাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, যদি তিনি কখনও এ নিয়ে মুখ খোলেন, তা হলে পরিণতি 'ভয়ানক' হতে পারে।

অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর প্রজ্জ্বলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬(২)(কে), ৩৭৬(২)(এন), ৩৫৪, ৫০৬ এবং ২০১ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলা দায়ের হয়েছিল ২০০৮ সালের তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬(ই) তম ধারার অধীনেও। উল্লেখ্য, এটি প্রজ্বলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বেশ কয়েকটি মামলার মধ্যে একটি।

গত বছরের ২৮ এপ্রিল থেকে ১০ জুনের মধ্যবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে মোট চারটি এফআইআর দায়ের করা হয়। পৃথক মামলাও দায়ের করা হয় প্রজ্বলের বাবা হোলেনারসিপুরার বিধায়ক রেভান্নার বিরুদ্ধে।