আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের আগামী জনগণনা, অর্থাৎ ২০২৭ সালের জনগণনা পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হবে পার্লামেন্টে এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্র। ২০১১ সালের শেষ জনগণনার পরে ২০২১ সালেই মূলত জনগণনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেই সময় কোভিড-১৯ মহামারি এবং পরে অজ্ঞাত কারণে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। ফলত সেই কাজ দীর্ঘ ছয় বছর পিছিয়ে যায়। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল যে, কোভিড-এর সময় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না, তবে এখন প্রশ্ন উঠছে যে, তখনই যদি জনগণনায় ডিজিটাল পদ্ধতির কথা ভাবা হতো, তবে কি এতটা হতো?
সমাজবাদী পার্টির সাংসদ সনাতন পাণ্ডের প্রশ্নের উত্তরে লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় জানান যে 'জনগণনা ২০২৭' সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হবে। এই কাজে যাদের নিয়োগ করা হবে তারা মোবাইলে একটি বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করবেন, আর এর সঙ্গে যদি সাধারণ মানুষ চান তাহলে তারা সরকারি ওয়েব-পোর্টালের মাধ্যমে নিজেরাই তথ্য আপলোড করতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত ও পর্যবেক্ষণ করা হবে একটি নির্দিষ্ট ডিজিটাল পোর্টালের মাধ্যমে ।
যদিও এই ঘোষণায় খুব স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে দেশের একটা বিপুল সংখ্যক জন্যসংখ্যার মানুষ এখনও স্মার্টফোন বা উপযুক্ত ইন্টারনেট কানেকশন পান না, তাঁরা কি ঠিকমতো এই ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের নথিভুক্ত করতে পারবেন? পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত তথ্য ডিজিটাল পোর্টালের মাধ্যমে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করলে সেটা কতটা সুরক্ষিত রাখা যাবে।
অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক ও অস্থায়ী বাসিন্দাদের জনগণনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছে, জনগণনার সময় যে ব্যক্তি যেই স্থানেই উপস্থিত থাকবেন, সেখানেই তাঁর তথ্য নথিভুক্ত করা হবে। জন্মস্থান, শেষ বাসস্থান, বর্তমান বাসস্থানে থাকা-থাকার সময়কাল ও অন্য স্থানে পাড়ি দেওয়ার কারণ ইত্যাদি, সমস্ত তথ্যই সংগ্রহ করা হবে। যাবতীয় প্রশ্নপত্র গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে জনগণনা শুরু হওয়ার আগে, এমনটা জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল প্রকল্পগুলোতে শ্রমিকদের নাম বাদ পড়ার ঘটনায় অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষত ১০০ দিনের কাজে নাম তোলার প্রক্রিয়ার সময় এক মাসের মধ্যে প্রায় ২৭ লাখ শ্রমিকের নাম ডাটাবেস থেকে মুছে যায় যা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ফলে জনগণনায় ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার কতটা কার্যকরী হবে এবং সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারবে, তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠন ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।
কেন্দ্র জানিয়েছে যে জনগণনা দুই ধাপে কার্যকর করা হবে। প্রথম ধাপে ২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে, আর দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রসঙ্গত, এ বারের জনগণনায় জাতিগত গণনার তথ্যও অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা দেশের রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, দীর্ঘ টালবাহানার পর ডিজিটাল জনগণনার ঘোষণা প্রশাসনিক কাজকর্মে আধুনিকতার ইঙ্গিত দিলেও, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা, সবার অন্তর্ভুক্তি এবং সবাই ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নগুলি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
