আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয়ের পর নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে জন সুরাজ পার্টির অভিযোগকে কেন্দ্র করে। দলের জাতীয় সভাপতি উদয় সিং দাবি করেছেন, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন বিহার সরকার বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া ১৪,০০০ কোটি টাকার ঋণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে “বিভ্রান্তভাবে” ব্যবহার করেছে।
এমনকি জুন মাস থেকে নির্বাচন ঘোষণা পর্যন্ত মোট ৪০,০০০ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রকল্প, অনুদান ও উপহার হিসেবে খরচ করা হয়েছে ভোট কেনার উদ্দেশ্যে, বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
শনিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উদয় সিং বলেন, “এই পরিমাণ খরচ বিহারের ইতিহাসে নজিরবিহীন। নির্বাচনের আগে জনসাধারণকে খুশি করতে সরকারি অর্থ প্রশ্নবিদ্ধভাবে ব্যয় করা হয়েছে।” তার মূল অভিযোগ, বিশ্বব্যাঙ্কের প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ১৪,০০০ কোটি টাকা নানা ধরনের আর্থিক অনুদান ও ক্যাশ ট্রান্সফারের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছে— যার সরাসরি রাজনৈতিক প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে।
উদয় সিং বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’, যার আওতায় নির্বাচনের ঠিক আগে রাজ্যের মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০,০০০ করে পাঠানো হয়। তার অভিযোগ—মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট জারি হওয়ার পরও মহিলাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকা চলতে থাকে। ফলে দরিদ্র ও স্বনির্ভরতার অভাবে থাকা বহু মহিলা ভোটার এই অর্থে প্রভাবিত হন। তিনি বলেন, “সম্ভবত এটাই প্রথমবার, ভোটের একদিন আগেও মানুষ টাকা পাচ্ছেন। এটি ভোটারদের স্বাভাবিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট।”
উদয় সিং বলেন, “আমরা যখন বৃদ্ধ ভাতা ২,০০০ করার প্রতিশ্রুতি দিলাম, তখনই সরকার তাড়াহুড়ো করে ৭০০ থেকে ১,১০০-তে বাড়িয়ে দেয়। এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে জনসাধারণের অর্থকে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, জন সুরাজ পার্টির সম্ভাব্য ভোটারদের একটি অংশ RJD–র ‘জঙ্গলরাজ’-এ ফিরতে পারে এমন ভয়ে NDA–কে ভোট দিয়েছে। যদিও তিনি স্পষ্ট করেন—“আমি বলছি না যে কোনও জঙ্গলরাজ চলছে, কিন্তু মানুষের মনে সেই ভয় ছিল।”
দলের আরেক নেতা পবন ভার্মা জানান—
বিহারের ঋণের পরিমাণ এখন ৪,০৬,০০০ কোটি
প্রতিদিন সুদ দিতে হচ্ছে ৬৩ কোটি
সরকারি কোষাগার শূন্যের কাছাকাছি
তার দাবি, মহিলাদের অ্যাকাউন্টে যেসব টাকা পাঠানো হয়েছে, তার একটি বড় অংশ এসেছে বিশ্বব্যাঙ্কের ২১,০০০ কোটি টাকার প্রকল্প তহবিল থেকে। তিনি আরও বলেন— “নির্বাচনের আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ১৪,০০০ কোটি টাকা তোলা হয় এবং ১.২৫ কোটি মহিলাকে বিতরণ করা হয়।” এই বিস্ফোরক অভিযোগের পরও NDA বা বিহার সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনের ফলাফল: NDA-র ঝড়ো জয়
এই নির্বাচনে NDA মোট ২০২টি আসন পেয়ে বিপুল জয়লাভ করেছে। BJP পেয়েছে ৮৯। JDU ৮৫। LJP (রামবিলাস) ১৯। HAM ৫। রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা ৪। অন্যদিকে মহাগঠবন্ধন পেয়েছে মাত্র ৩৫টি আসন— যার মধ্যে RJD–র ২৫ আসন ২০১০–এর পর সবচেয়ে খারাপ ফল। বিহারে ভোট হয়েছিল দুই দফায়— ৬ ও ১১ নভেম্বর। এবার ভোটার উপস্থিতি ছিল রেকর্ড ৬৬%, যা ১৯৫১ সালের পর সর্বোচ্চ।
