বেঁচে থাকলে এ দিন সন্তোষ দত্তের বয়স হতো ১০০। সত্যজিতের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর হাল্লার রাজা তিনি। আবার শুন্ডির রাজা-ও তিনি। ওদিকে ‘জটায়ু’র প্রায় সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ হিসাবেও উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। তিনি সন্তোষ দত্ত।
2
8
সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের ‘সোনার কেল্লা’ গল্পে প্রথম আবির্ভাব হয় জটায়ুর। গোড়ার দিকে জটায়ুর ইলাস্ট্রেশন পুরোপুরি আলাদা ছিল। তারপর সোনার কেল্লা ছবিতে সন্তোষ দত্ত এমন অভিনয় করে বাজিমাত করে দিলেন যে সত্যজিৎ দেখলেন, এই রে আর তো জটায়ুকে অন্যরকমভাবে আঁকা যাবে না। তাই 'জটায়ু'র ইলাস্ট্রেশন পুরো তাঁর মতো হয়ে গেল। কোনও ছবির অভিনেতাকে দেখে সাহিত্যের চরিত্রের ইলাস্ট্রেশন পাল্টে গেল, এটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।
3
8
সুকুমার রায়ের স্ত্রী তথা সত্যজিতের মা সুপ্রভা দেবীরও বেশ ভাল লাগত সন্তোষ দত্তের অভিনয়। ১৯৫৭ সালে মহারাষ্ট্র নিবাস হলে ‘চলচ্চিত্তচঞ্চরী’ নাটকে ‘ভবদুলাল’-এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সন্তোষ দত্ত। সেখানেই ওঁর অভিনয় দেখেছিলেন সুপ্রভা দেবী এবং সত্যজিৎ। দেখামাত্রই সত্যজিতের ভীষণ ভাল লেগে গিয়েছিল তাঁর অভিনয়। তারপরই সেই বিখ্যাত তলব। এরপরেই ‘পরশ পাথর’-এ একটা ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সন্তোষ দত্ত।
4
8
আড্ডা দিতে খুব ভালবাসতেন। উকিলের চেম্বার হোক কিংবা শুটিং ইউনিট - হাসি, গল্পে মাতিয়ে রাখতেন। তবে কাজের সময় ভীষণ সিরিয়াস ছিলেন। চিত্রনাট্যটা খুব ভাল করে পড়া থাকত সন্তোষদার। অভিনয়ে নানারকম ইম্প্রোভাইজেশন করতেন। পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেই।
5
8
তাঁর সমসাময়িক দু'জন নায়ককে উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি। সে শুধু অভিনয়ের জন্য নয়, তাঁদের স্ট্রাগলের কারণে। সেই প্রথম নামটা যদি হয় উত্তমকুমার, তো দ্বিতীয় জন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
6
8
ফুটবল খেলার বেজায় ভোক ছিলেন। মোহনবাগানের পাঁড় ভক্ত ছিলেন। আরও একটা বিষয়ে মাতামাতি ছিল ওঁর। রান্না। ছুটির দিনে বাজারে গিয়ে নিজের হাতে মাংস আনতেন। তারপর নিজের হাতে জমিয়ে মাংস রান্না করতেন।
7
8
প্রথম জীবনে ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। টানা চোদ্দ বছর সে কাজে ছিলেন। তার মাঝেই আইনি পড়াশোনা করতেন। এরপর যখনহঠাৎ শুনলেন ওড়িশায় তাঁকে ট্রান্সফার করে দেওয়া হবে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কের চাকরিতে ফুলস্টপ বসলেন। তারপরেই আইনি পেশায় চলে গেলেন।
8
8
সন্তোষ দত্ত সম্পর্কে সন্দীপ রায় বললেন, “আসলে বাবা চাইতেন কয়েকজন অভিনেতার সঙ্গে বারবার কাজ করতে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সন্তোষ দত্ত। ভীষণ পছন্দ করতেন বলেই না যখন তেমন কোনও পছন্দের চরিত্র তিনি তৈরি করতেন, দুম করে সন্তোষ দত্তকে ফোন করে দিতেন। বাবা সবসময়ই চাইতেন ওঁকে যদি কোনওভাবে ছবিতে কাজে লাগানো যায়। রবি ঘোষের বেলাতেও এটা করতেন বাবা।”