ভারতীয় টেলিভিশনের ইতিহাসে পঙ্কজ ধীরের নাম চিরকাল খোদাই হয়ে থাকবে, যিনি বি.আর. চোপড়ার মহাভারত-এ কার্ণের চরিত্রে এক অনন্য ছাপ রেখে গিয়েছিলেন।ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে বুধবার প্রয়াত হলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৬৫।
2
10
কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন, ‘মহাভারত’-এর সেটে কাজ করতে গিয়েই একাধিকবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছিলেন পঙ্কজ ধীর। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অভিনেতা নিজেই বলেছিলেন, কীভাবে শুটিং চলাকালীন চোখে ঢুকে গিয়েছিল তীর- যা তাঁর পুরো কেরিয়ার শেষ করে দিতে পারত।
3
10
“কর্ণ আর অর্জুনের যুদ্ধের দৃশ্য চলছিল। এক তীর আমার ধনুকে আঘাত করার কথা ছিল, কিন্তু যান্ত্রিক সমস্যার কারণে সেটা সোজা আমার চোখের কোণে ঢুকে যায়। তীরটা বার করার সঙ্গে সঙ্গেই রক্তের ফোয়ারা বেরিয়ে আসে! চারপাশে সবাই তখন চেঁচাচ্ছে— ‘পঙ্কজ ধীর অন্ধ হয়ে গেছেন!’ আমি তখন ভাবছি, আমার কেরিয়ার তো সবে শুরু, এখন কী হবে তাহলে?”
4
10
সেই সময় শুটিং হচ্ছিল ফিল্ম সিটিতে — চারপাশ জঙ্গল, চিকিৎসক বহু দূরে। অভিনেতাকে কোনওরকমভাবে নিয়ে যাওয়া হয় এক ছোট চিকিৎসাকেন্দ্রে, যেখানে এক বৃদ্ধ ডাক্তার ইনজেকশন, সেলাই, ব্যান্ডেজ একা হাতেই সব করেন। সেই ডাক্তারই বাঁচিয়ে দেন তাঁর চোখ— আর সেই সঙ্গে তাঁর অভিনয়জীবন।
5
10
তবে এতবড় দুর্ঘটনার পরেও কিন্তু বিশ্রামের সুযোগ পাননি পঙ্কজ। অভিনেতা বলেছিলেন, “রবি চোপড়া ফোন করে বললেন, কর্ণ ছাড়া এই ধারাবাহিকের পর্ব এগোবে না, তাই তোমাকে আসতেই হবে। তখন আমার চোখে ব্যান্ডেজ। তাই একদিকের মুখ নিয়েই শট নেওয়া হল!” হাসতে হাসতে বলেছিলেন অভিনেতা।
6
10
কিন্তু ‘মহাভারত’-এর সেটে এটাই কিন্তু তাঁর শেষ দুর্ঘটনা ছিল না। পঙ্কজ ধীরে কথায় ,“একবার যুদ্ধের দৃশ্যে আমার রথের ওয়েল্ডিং ভেঙে যায়। সারথি ছিটকে পড়ে যায়, ঘোড়াগুলো আলাদা হয়ে যায়, রথটা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ঢাল বেয়ে নিচে নামছিল। সামনেই ছিল এক গভীর খাদ। আমি বুঝলাম, না ঝাঁপালে একেবারে মৃত্যু নিশ্চিত। তাই ঝাঁপ দিলাম। হাঁটুতে চোট পেলেও বেঁচে গেলাম!”
7
10
তাঁর আরও একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল ভীমের সঙ্গে লড়াইয়ের দৃশ্যে। প্রাক্তন ডিসকাস থ্রোয়ার প্রবীণ কুমার সবতী নাকি এত জোরে আঘাত করেছিলেন যে পঙ্কজের সব আঙুল ভেঙে গিয়েছিল! অভিনেতা বলেছিলেন, “ভীমের চরিত্রে যিনি ছিলেন, তিনি অভিনেতা ছিলেন না। তাই সত্যি সত্যিই ঘুঁষি মারতেন।
8
10
আমার সব আঙুল ভেঙে যায়। তখন আমার ছেলে মাত্র আট বছর বয়সি। ও যখন দেখে, ভীম আমায় ওইভাবে মারছে, তখন ও পর্যন্ত ভীমকে বকেছিল!”
9
10
ফারাহ খানের এক ভ্লগে পঙ্কজ আরও জানান, মহাভারত-এর শীর্ষ অভিনেতারা প্রতি এপিসোডে মাত্র ৩,০০০ টাকা করে পারিশ্রমিক পেতেন -“এক সপ্তাহ যদি শুট না করতাম, সেই টাকাও পাওয়া যেত না। তাই আমাদের আসল রোজগার হত শো-রুম উদ্বোধন, বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে পারফর্ম করে।”
10
10
আজ পঙ্কজ ধীর নেই, কিন্তু তাঁর লড়াই, দুঃখ আর একাগ্রতার কাহিনি আজও দর্শকদের অনুপ্রেরণা দেয়, এক সত্যিকারের যোদ্ধার মতোই তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজের চরিত্রের মতো ‘কর্ণ’-এর মর্যাদা বজায় রেখেছিলেন।