পেনশনভোগীদের দাবি আবারও জোরালো হয়ে উঠেছে চলতি শীতকালীন সংসদ অধিবেশনে। ইপিএস-৯৫ (EPS-95) পেনশন স্কিমের অধীনে মাসিক ন্যূনতম পেনশন বাড়ানোর বিষয়টি বহু বছর ধরেই অবসরপ্রাপ্তদের প্রধান দাবির তালিকায় রয়েছে। বাড়তি মুদ্রাস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান দামের চাপে লক্ষ লক্ষ পেনশনভোগী জীবিকা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
2
10
২০২৫ সালের ১ ডিসেম্বর লোকসভায় একটি প্রশ্নের উত্তরে সরকার জানায়, ইপিএফও-পরিচালিত এই স্কিমের অধীনে ন্যূনতম পেনশন ১,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭,৫০০ টাকা করার কোনও প্রস্তাব বর্তমানে সরকারের কাছে নেই। EPS-95 স্কিমটি ১৯৯৫ সালে চালু হয়েছিল, যা একটি অবদানভিত্তিক ও সুবিধাভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প। বর্তমানে এই স্কিমের আওতায় ৮০ লক্ষেরও বেশি পেনশনভোগী আছেন।
3
10
২০১৪ সালে ন্যূনতম পেনশন ১,০০০ টাকায় উন্নীত করা হলেও এরপর গত ১১ বছরে তা আর বাড়ানো হয়নি। এদিকে, এই সময়ে জীবনের ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছে, যার ফলে পেনশনভোগীরা দাবি তুলছেন যে ১,০০০ টাকা মাসিক ভাতা আজকের দিনে কার্যত অপ্রতুল। তাই ন্যূনতম পেনশন কমপক্ষে ৭,৫০০ টাকায় উন্নীত করা, নিয়মিত মহার্ঘভাতা (DA) চালু করা এবং উচ্চ পেনশনের সুবিধা পুনর্বহাল করার দাবিও ওঠে বিভিন্ন পেনশনভোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে।
4
10
শীতকালীন অধিবেশনে প্রশ্ন ওঠে— সরকার কি ন্যূনতম পেনশন বাড়ানোর কথা ভাবছে, EPS-95 পেনশনভোগীদের কেন DA দেওয়া হয় না এবং বয়স্কদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নেবে।
5
10
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শোভা করন্দলাজে এই প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্ট করেন যে ন্যূনতম পেনশন বাড়ানোর কোনও প্রস্তাব সরকারের বিবেচনায় নেই। তিনি জানান, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে স্কিমের সর্বশেষ অ্যাকচুয়ারিয়াল মূল্যায়নে দেখা গেছে, EPS তহবিল বর্তমানে ঘাটতিগ্রস্ত এবং ভবিষ্যৎ আর্থিক দায়বদ্ধতা মেটানোর জন্য যে পরিমাণ অবদান প্রয়োজন, তা পর্যাপ্ত নয়।
6
10
সরকার বলেছে, কোনও অতিরিক্ত অর্থের উৎস ছাড়া পেনশন বাড়ানো হলে তহবিলের স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ দায়ভার আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সরকারের অবস্থান— “সর্বোচ্চ সুবিধা” দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
7
10
তবে সরকারের এই জবাবে পেনশনভোগীদের হতাশা আরও বেড়েছে। কারণ এতে ন্যূনতম পেনশন বাড়ানোর বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট রোডম্যাপ, সময়সীমা বা বিকল্প তহবিল তৈরির পরিকল্পনার ইঙ্গিত নেই।
8
10
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত এক দশকে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ১,০০০ টাকা মাসিক পেনশন দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাও পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। করদাতার অর্থ বা সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে তহবিল বাড়িয়ে পেনশন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলে অনেকের মত। পেনশনভোগী সংগঠনগুলি একাধিকবার দাবি জানিয়েছে যে ৮০ লক্ষ প্রবীণ নাগরিকের জীবন রক্ষার জন্য ন্যূনতম পেনশন বৃদ্ধি অত্যাবশ্যক।
9
10
সংগঠনগুলি এটাও মনে করিয়ে দিয়েছে যে অধিকাংশ EPS-95 পেনশনভোগী দীর্ঘ কর্মজীবন ধরে অবদান রেখেছেন, তাই বার্ধক্যে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
10
10
অধিবেশন চলতে থাকায়, পেনশনভোগীরা এখন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছেন, যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের দাবিগুলি শীঘ্রই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করা হচ্ছে।