প্রতি বছর দীপাবলির আগে যে দিনটি ধনতেরাস নামে পালিত হয়, তা কেবল ধন-সম্পদের প্রতীক নয়, একইসঙ্গে ভারতীয় পুরাণের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। যা হল সমুদ্র মন্থন। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই দিনেই ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশে দেবতা ও অসুররা একসঙ্গে সমুদ্র মন্থন করেছিলেন। যার ফলেই আবির্ভাব ঘটে চিকিৎসা ও আয়ুর্বেদের দেবতা ভগবান ধন্বন্তরির।
2
6
পুরাণে বলা হয়েছে, একসময় দেবতা ও অসুরদের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়। দেবতারা তখন নিজেদের শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। সেই সময় ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের পরামর্শ দেন, সমুদ্র মন্থন করলেই ‘অমৃত’ লাভ করা যাবে, যা তাদের আবার অমরত্ব দেবে। দেবতা ও অসুররা তখন মিলে মাউন্ট মন্দার পর্বতকে দণ্ড হিসেবে এবং বাসুকী নাগকে রশি হিসেবে ব্যবহার করে মন্থন শুরু করেন।
3
6
সমুদ্র মন্থনের সময় বহু মূল্যবান বস্তু ও দেবদেবী সমুদ্র থেকে উঠে আসেন। যেমন দেবী লক্ষ্মী, ঐরাবত হাতি, কামধেনু গাই, পারিজাত বৃক্ষ প্রভৃতি। শেষে সমুদ্রের গভীর থেকে সোনালি আলো ছড়িয়ে আবির্ভূত হন ভগবান ধন্বন্তরি, তাঁর হাতে ছিল অমৃতভরা কলশ ও আয়ুর্বেদের শাস্ত্র।
4
6
কথিত রয়েছে, তাঁকে দেখা মাত্রই দেবতারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। কারণ ধন্বন্তরি কেবল অমৃতের ধারকই নন, তিনিই মানবজাতির রোগ-ব্যাধি নাশের প্রতীক। তাঁর আগমনকে ধনতেরাসের সূচনা মুহূর্ত হিসেবে ধরা হয়।
5
6
কেন পালন করা হয় ধনতেরাস? এই দিনটি ধন, স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়। বিশ্বাস করা হয়, ধনতেরাসের দিনে সোনা, রুপো, বাসন বা নতুন কিছু কেনাকাটা করলে ঘরে লক্ষ্মী ও ধন্বন্তরির আশীর্বাদ আসে। বহু মানুষ এদিন আয়ুর্বেদ ও চিকিৎসাবিদ্যার পৃষ্ঠপোষক ধন্বন্তরিকে পূজা করেন, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবনের প্রার্থনা করেন।
6
6
ধনতেরাস শুধুমাত্র কেনাকাটার দিন নয়, এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রকৃত ধন মানে শুধু অর্থ নয়, বরং সুস্বাস্থ্য ও শান্তিই মানুষের জীবনের আসল সম্পদ। সমুদ্র মন্থনের সেই পৌরাণিক কাহিনি আজও এই উৎসবকে অর্থ ও আধ্যাত্মিকতার অনন্য সংযোগে বেঁধে রাখে।