এক সপ্তাহ আগে মুক্তি পেয়েছে ‘রক্তবীজ ২’-এর নতুন গান ‘অর্ডার ছাড়া বর্ডার ক্রস’। খানিক বিতর্কিত লিরিক্স, ব্যতিক্রমী কণ্ঠস্বর এবং নুসরাত জাহানের অফুরন্ত লাস্যে গানটি ইতিমধ্যেই ঝড় তুলেছে জনপ্রিয়তার আঙিনায়। ইউটিউবে ভিউ ছুঁয়েছে এক মিলিয়নের গণ্ডি। তার সঙ্গেই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সেই সংখ্যা পেরিয়ে গেছে সাড়ে তিন মিলিয়ন। এহেন ‘মশলা’ গানের স্রষ্টা কিন্তু জিনিয়া সেন— যাঁকে এতদিন সকলে জানতেন গম্ভীর ও রাশভারী বিষয়ভিত্তিক ছবির গল্পকার বা চিত্রনাট্যকার হিসাবে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ এমন পথবদল কীভাবে সম্ভব হল?
জিনিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ‘অর্ডার ছাড়া বর্ডার ক্রস’–এর লিরিক্স লিখেছেন শিলাজিৎ মজুমদার। শিবপ্রসাদের অনুরোধে, গানের মূলভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি সরল গদ্যে নয়, বরং কবিতার ছন্দে সাজিয়ে লিখে দিয়েছিলেন সেই ভাবনা। আজকাল ডট ইন-কে জিনিয়া বলেন, “শিলাজিৎদার কাঁধে ছিল এই গান তৈরির দায়িত্ব। হুক লাইনটা উনি আগেই লিখে ফেলেছিলেন। বর্ডার ক্রসের বিষয়টা তাঁকে বিস্তারিত বুঝিয়ে মূল ভাবনাটা আমাকে লিখে দিতে বলেছিল শিবপ্রসাদ। সকলে ভেবেছিল, আমি সহজ গদ্যেই হয়তো সেটা করব। কিন্তু সেটা না করে আমি পদ্যের মতো করেই পুরো বিষয়টা লিখে দিই। এবং সেটাকে গানে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
বর্তমানে রিল-শর্টসে ঘুরে বেড়ানো এই গানকে নিছক ‘আইটেম সং’ বলতে রাজি নন জিনিয়া। জীবনের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার ছাপও মিশে আছে এই লিরিক্সে। তাই চোখ ধাঁধানো জাঁকজমকে মুড়ে থাকলেও সহজেই জীবনের মূল স্রোতে মিশে যেতে পারে ‘অর্ডার ছাড়া বর্ডার ক্রস’। জিনিয়ার কথায়, “আমি দক্ষিণ কলকাতায় থাকি। সেখানেই বড় হয়েছি। কাজের সূত্রে কিছুটা পরিচিতিও পেয়েছি। নিজেকে একেবারে সুবিধাবঞ্চিত বলতে পারি না। সেখানেও আমি এবং আমার দাদা অর্পণ সেন জালিয়াতির শিকার হয়েছি। একদিন আমার বুঝতে পারি, আমাদের প্রপার্টি ডেভেলপার আমার দাদার পরিচয়পত্র নকল করে আমাদের দু’টি ফ্ল্যাট তিন-তিন বার বিক্রি করে সেগুলিকে লিটিগেটেড করে দিয়েছে। অর্থাৎ সেই প্রপার্টি আমাদের বিক্রি করতে অসুবিধা হবে। আমরা সেটাকে প্রোমোটারকে কম দামে ছেড়ে দিতে বাধ্য হব।”
এরপর ব্যক্তিগত সমস্যার জেরে জিনিয়াদের একাধিকবার থানায় দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। সেখান থেকেই বৃহত্তর ক্যানভাসে আধার, পাসপোর্ট কিংবা প্যান কার্ডকে ঘিরে চলতে থাকা অসাধু চক্রকে আরও স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করেন তিনি। শিল্পীর কথায়, “এরপর আমি যদি গানে লিখি যে, ‘বাপের নাম বদলে হল ঝকঝকে পাসপোর্ট’, তাহলে তা সম্পূর্ণ ভাবে আমি তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত। পুলিশ এবং প্রশাসনকে অনুরোধ করব, তাঁদের কানে যদি আমার এই গান পৌঁছে থাকে, তবে তাঁরা যেন এই অসাধু চক্রগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেন।”
‘রক্তবীজ ২’-এ নুসরতের উপস্থিতি নিয়েও কম চর্চা নয়। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—গান যেহেতু বিতর্কিত, তাই কি ইচ্ছে করেই বিতর্কে জড়ানো নায়িকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে? জিনিয়ার সোজাসাপটা উত্তর, “এই গানের জন্য এমন একজন মুখ চেয়েছিলাম, পর্দায় যাঁর কথা মানুষ শুনবেন। তাঁকে সিরিয়াসলি নেবেন। নুসরত তেমনই একজন। ২২ বছর ধরে ওকে চিনি। প্রচুর আড্ডাও হয়েছে। কিন্তু কখনও কাজ করা হয়নি। শিবপ্রসাদকে ওর কথা বলায় ও রাজি হয়ে যায়। অবশেষে আমাদের একসঙ্গে কাজ হল।”
‘আইটেম সং’-কে অনেক সময়ই বাঁকা চোখে দেখা হয়। অনেকেরই ধারণা, এগুলি শুধুমাত্র দর্শকের মনোযোগ কেড়ে আনার জন্য, ছবির গল্পে তেমন কোনও ভূমিকা রাখে না। তবে জিনিয়া একেবারেই ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বললেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমার আইটেম সং পছন্দ। স্ত্রী ২-র আজ কি রাত খুবই ভাল লেগেছিল। আমার ছবিতে যদিও চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে আইটেম গান ব্যবহার করেছি। কিন্তু আমি মনে করি, নির্মাতারা যে ভাবে খুশি, এটি তাঁদের ছবিতে ব্যবহার করতে পারেন। তাতে অন্তত আমি কোনও ক্ষতি দেখি না।”
