বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বিভিন্ন রাজ্যে অত্যাচারের অভিযোগ উঠছে। বাংলা ভাষায় কথা বলায় তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে অত্যাচার করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে এমন অভিযোগ বারে বারে উঠেছে। সম্প্রতি, বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে চিঠি লেখায় বিরাট বিতর্কের মুখে দিল্লি পুলিশ। বঙ্গভবনে পাঠানো একটি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলে উল্লেখ করেছে তারা। দিল্লি পুলিশের ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, তাদের বাংলা অনুবাদক দরকার। কয়েকদিন আগে দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে। তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আর সেসব নথিগুলি বাংলা ভাষায় লেখা। সেসব নথির তথ্য যাচাইয়ের জন্য একজন অনুবাদক প্রয়োজন। চিঠিতে লেখা, ‘বাজেয়াপ্ত হওয়া নথিগুলি বাংলাদেশি ভাষায় লেখা এবং সেগুলি হিন্দি এবং ইংরাজিতে অনুবাদ করা দরকার। আমাদের এমন একজন অনুবাদক দরকার যিনি বাংলাদেশি ভাষায় দক্ষ’। আর চিঠির এই অংশকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। চিঠিটিকে টুইট করে দিল্লি পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বাংলার তারকাদেরও এ প্রসঙ্গে গর্জে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এবার সেই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। ‘বাংলা ভাষা’র জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির যে লড়াই, তাতে সামিল হলেন প্রসেনজিৎ।
এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভাষা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমার মনে হয় আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এই নিয়ে বিবৃতি জারি করেছেন। তবে আমি বলতে পারি, বাংলা ভাষা ছিল, আছে, থাকবে। তার জন্য যে কোনও লড়াই করতে হয় আমরা করব।’
তবে কিছু দিন আগে একটি হিন্দি ছবির প্রচারের সময় বাংলার এক সাংবাদিক তাঁকে বাংলায় প্রশ্ন করায়, তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন ' আপনি বাংলায় প্রশ্ন করছেন কেন?' এবং তা জিজ্ঞাসা করে বাংলার মানুষদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন এই অভিনেতা। যদিও পরে নায়ক জানিয়েও ছিলেন কেন তিনি এই কথা বলেন।
প্রসেনজিৎ একটি বিবৃতি দিয়ে লিখেছিলেন,'কিছুদিন হল আমার একটা কথা, বলা ভাল আমার বলা একটা বাক্য, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটা নিয়েই কিছু বলতে চাই। আমি ৪২ বছর ধরে মূলত বাংলায় কাজ করেছি। গত কয়েক বছরে জাতীয় স্তরে কাজ করারকয়েকটা সুযোগ এসেছে। সেরকমই এক হিন্দি সিনেমার ট্রেলার মুক্তি উপলক্ষে, ১ জুলাই বম্বের জুহু পিভিআরে সাংবাদিক সম্মেলন হচ্ছিল। ডায়াসে যারা ছিলেন ছবিরশিল্পী, পরিচালকরা মূলত ইংরেজিতেই কথা বলছিলেন। বাংলার একজন সাংবাদিক আমায় বাংলায় প্রশ্ন করেন। তিনি আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। অত্যন্ত স্নেহের পাত্রী। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল, বাংলায় জবাব দিলে হয়তো অনেকেই তা বুঝতে পারবেন না। যেহেতু ওখানে বাংলা ভাষা বোঝেন না এমন মানুষই বেশি। তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই আমি ওনাকে বলি, বাংলায় কেন প্রশ্ন করছেন?'
আরও বলেছিলেন, 'যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই একটা সেনটেন্সই তুলে ধরা হয়েছে, তাই অনেতকেই আমার বলা কথার আক্ষরিক অর্থ না বুঝে আঘাত পেয়েছেন। কষ্ট আমিও পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি। কারণ ওই কথার ওরকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে, আমি ভাবতেই পারিনি। হয়তো কয়েকটা ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে আর বলা কথার আক্ষরিক অর্থ আমি বোঝাতে পারিনি। আর আমার ধারণা সেখান থেকেই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মাতৃভাষাকে অসম্মান করার কথা, আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। বাংলা আমার প্রাণের ভাষা।’
