এসি মাল্টিপ্লেক্সের চাকচিক্যের যুগে ধুঁকছে রাজ্যের সিঙ্গল স্ক্রিনগুলি। বছর সাতেক আগে দীর্ঘ ৭৮ বছরের ঐতিহ্যের অবসান ঘটিয়ে বন্ধ হয়েছে এলিট সিনেমা হল। তারপর পালা ছিল দক্ষিণ কলকাতার রানিকুঠি অঞ্চলের আরেক ঐতিহ্য মালঞ্চের। টালিগঞ্জের এই কয়েক দশকের অভিজাত সিনেমা হলটি কেন বন্ধ হয়েছিল? এক সাক্ষাৎকারে প্রেক্ষাগৃহের মালিক অমর রায়চৌধুরি জানিয়েছিলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে লোকসানে চলছে হল। মাল্টিপ্লেক্সের ভিড়ে এই হলে তেমন কেউ আসেন না। কয়েকজন মাত্র দর্শক হয়। অথচ এত বড় প্রেক্ষাগৃহের এসি-র বিলই মাসে আসে কয়েক লক্ষ টাকা। তার উপরে কর্মচারীদের বেতন রয়েইছে। এভাবে আর কতদিন চালানো যায়। তাই এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিল এই সিঙ্গল স্ক্রিন নাকি একটি জাতীয় স্তরের একটি মাল্টিপ্লেক্স চেন কিনে নিয়েছিল তাদের সংস্থার প্রেক্ষাগৃহ খোলার লক্ষ্যে। তবে সেসব গুঞ্জন এখন অতীত। আর কোনওদিন যেমন খুলবে না মালঞ্চ, তেমনই আর কোনওদিন এই জায়গায় ভিড় করবে না উৎসাহী জনতা, শোনা যাবে অনুরাগীদের হল্লা। কারণ মালঞ্চ প্রেক্ষাগৃহের অন্দরসজ্জা থেকে খোলনলচে সবই বদলে গিয়েছে একটু একটু করে।

মালঞ্চ-র জায়গায় এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে একটি জনপ্রিয় সোনার গয়না বিপণনের নতুন শাখা। আপাতত সেই কাজ-ই পুরোদমে চলছে। বহুতলের সমগ্র জুড়েই থাকবে সেই বিপণি। গত দু'মাস ধরে জোরকদমে কাজ চলছে। খবর, পুজোর আগেই উদ্বোধন হবে এই গয়না বিপণনের নতুন শাখা। এইমুহূর্তে দু’শিফটে চলছে কাজ।

পশ্চিমবঙ্গের বন্ধ সিনেমা হলগুলোর প্রতি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাকরণ ভাঙা ট্রিবিউট দিয়েছিলেন তাঁর সিনেমাওয়ালা ছবির মাধ্যমে। কোনও সংজ্ঞা নয়, তত্ত্বকথা নয়, নায়ক-নায়িকার গ্ল্যামার নয়। পর্দায় আছড়ে পড়া সিনেমা আসলে জীবন। কিংবা তার চেয়েও বড় কিছু। এ ছবি ছিল আদতে সিনেমাহলের কান্না। যা দেখানো হয়েছিল, ফুটে উঠেছিল পর্দায় ছবির মুখ্যচরিত্র কমলিনী হলের মালিক পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে। মালঞ্চ-র এহেন বিবর্তনের খবর পেয়ে আজকাল ডট ইন-এর কাছে মুখ খুললেন সেই ‘সিনেমাওয়ালা’। “এই ঘটনা একটা স্বপ্নের শেষ। স্বপ্নের সমাধি। মহাকালের নিয়মে জীবন এগোচ্ছে, দেশ এগোচ্ছে, প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে আর যা যা আগেকার ছিল তারা বিলুপ্ত হচ্ছে...হয়ত এটাই নিয়ম। তাই বুক চাপড়ে কী করব? তবে এ অবশ্যই আফসোসের জায়গা। তবে সিনেমা কিন্তু বড় স্ক্রিন ছাড়া সভা পায় না। ওটাই ওর একমাত্র জায়গা। আর তাই সিনেমা কোনওভাবেই টি=পাঁচ ফুট, তিন ফুট, আড়াই ফুট স্ক্রিনে শোভা পায় না। আর এখন তো হাতের মুঠোয় চলে এসেছে ছবি দেখার সুযোগ...কী আর বলব! আর এর মধ্যে যদি মানুষ ঐটুকুর মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিতে পারে তাহলে তো আর কিছুই বলার নেই।

খানিক থেমে বর্ষীয়ান অভিনেতা আরও বললেন, “যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা যাচ্ছেন মাল্টিপ্লেক্সে। তাঁদের তো আটকানো যায় না। আর আটকাতে যাওয়া হবেই বা কেন? কিন্তু অধিকাংশ মানুষের সেখানে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই উপযুক্ত সরকারি পরিকল্পনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, বিদগ্ধ মানুষ, তারকাদেরও এগিয়ে আসতে হবে সিঙ্গল স্ক্রিন বাঁচানোর লক্ষ্যে। জোরজবরদস্তি করে নয়, আহ্বান করে...”
