স্বস্তির হাওয়া টলিউডে। আর হিন্দি ছবির দাপটে কোণঠাসা হবে না বাংলা।  রাজ্য সরকারের নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এবার থেকে রাজ্যের প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে সারা বছর ধরে বাংলা ছবির (৩৬৫ দিন) প্রাইম টাইম শো/স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। দীর্ঘ সময় ধরে বলিউডের সঙ্গে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অসম প্রতিযোগিতা নিয়ে সরব ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি নায়িকা।

নন্দনে বৈঠকের পর ঋতুপর্ণা বলেন, “খুবই প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এবং অরূপদাকে (বিশ্বাস) ধন্যবাদ। এই বিষয়টি আমি বহু দিন ধরে লড়ছি।  আমার মনে হয়, শুধু তিন-চারটি হাউজ নয়, এখানে অনেক পরিচালক-প্রযোজক আছেন যাঁরা মননশীল ছবি তৈরি করেন। বাংলাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেন। সেরকম ধরনের আরও সিনেমা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে হওয়া প্রয়োজন। আমাদের যা রুচি, আমাদের যা ভাললাগার সিনেমা, সেটা দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া আামাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই দায়িত্ব আমরা পালন করতে পারব না, যদি সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়।”

নায়িকার সংযোজন, “আমার মনে হয়, সিদ্ধান্ত একটু দেরিতে নেওয়া হল। কিন্তু অবশেষে নেওয়া হল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আরেকটু আগে নেওয়া হলে, যে ছবিগুলি এতদিন ভুগেছে, সেগুলি আরেকটু এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু আজকের এই সিদ্ধান্তে আমি খুশি।”

রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বছরের প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে বাংলা ছবির শো থাকবে। প্রাইম টাইম শো বলতে বিকেল তিনটে থেকে রাত ন’টার সময়কে বোঝানো হয়। এবং সেই সময়ে সব প্রেক্ষাগৃহে অন্তত একটি শো থাকবে বাংলা ছবির জন্য।

বাংলা ছবির প্রাইম টাইমে শো পাওয়া সংক্রান্ত আলোচনার জন‍্য বুধবার নন্দনে দুপুর দু’টোর সময়ে ডাকা হয় বৈঠক। ঋতুপর্ণার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, স্বরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, পিয়া সেনগুপ্ত, নিসপাল সিং রানে-সহ আরও অনেকে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম অ‍্যাকাডেমির চেয়ারম‍্যান অরূপ বিশ্বাস বলেন, “এখন নতুন অনেক পরিচালক আসছেন, প্রযোজক আসছেন। নতুন কন্টেন্ট হচ্ছে, নতুন শিল্পীরা আসছেন। আমরা চাই বাংলা সিনেমার প্রচার এবং প্রসার হোক। সেই কারণেই আমাদের সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

রাজ্যের মন্ত্রী তথা গায়ক ইন্দ্রনীল সেনের কথায়, “আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন। আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা টলিউডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছেন। এটি শুধু বাংলা ছবির জন্যই নয়, বাংলার সংস্কৃতির জন্যও নবজাগরণ।”

শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছে ঋতুপর্ণা অভিনীত ‘বেলা’। নারীশক্তির জয়গান গায় অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি। আকাশবাণীর কর্মী এবং লেখিকা বেলা দে-র জীবনীচিত্র তৈরি করেছেন তিনি। নামভূমিকায় ঋতুপর্ণা সাদামাঠা শাড়ি, লম্বা বিনুনি, কানে হেডফোন, মুখে হাসি, এভাবেই প্রথম বেলা হয়ে জনসমক্ষে আসেন নায়িকা। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবি। সেই সময় নিজের অধিকারের জন্য মেয়েরা লড়াই করবেন, এ কথা ছিল ভাবনাতীত। বেলা গিয়েছিলেন স্রোতের বিপরীতে। তৈরি করেছিলেন নিজের পরিচয়। বাস্তবের সেই চরিত্রে পর্দায় প্রাণকাঠি ছুঁইয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী।