পাঞ্জাবের বিনোদন এবং ক্রীড়াজগতে নেমে এল গভীর শোকের ছায়া। প্রয়াত পাঞ্জাবি বডিবিল্ডার ও অভিনেতা বরিন্দর সিং ঘুমান। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তাঁর অকালমৃত্যুর প্রাথমিক কারণ হিসেবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কথা বলা হলেও, এখনও পর্যন্ত তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে এই আকস্মিক প্রয়াণে স্তম্ভিত পাঞ্জাবসহ গোটা বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। বরিন্দর তাঁর সুঠাম দেহের জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন এবং সলমন খানের ব্লকবাস্টার ছবি 'টাইগার ৩' সহ একাধিক পাঞ্জাবি ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
বরিন্দর সিং ঘুমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাঞ্জাবের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও ডেরা বাবা নানক-এর বিধায়ক সুখজিন্দর সিং রানধাওয়া। তিনি তার শোকবার্তায় বরিন্দরের অসাধারণ জীবনযাত্রা এবং রাজ্যের জন্য তার অবদানের কথা তুলে ধরেন।
সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, 'পাঞ্জাবের বিখ্যাত বডিবিল্ডার এবং অভিনেতা বরিন্দর সিং ঘুমানের আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। নিজের কঠোর পরিশ্রম, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং প্রতিভার মাধ্যমে তিনি সারা বিশ্বে পাঞ্জাবের জন্য গর্ব বয়ে এনেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর আত্মাকে চিরশান্তি দিন এবং তার পরিবারকে এই মর্মান্তিক ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দিন।'
বরিন্দর সিং ঘুমানের জীবন ছিল পরিশ্রম ও সাফল্যের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে জন্মগ্রহণ করা এই তারকা ২০০৯ সালে 'মিস্টার ইন্ডিয়া' খেতাব জয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। শুধু ভারতেই নয়, এশিয়ায় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং 'মিস্টার এশিয়া'-তে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচিতি ছিল অন্য কারণে। বরিন্দর সিং ঘুমানকে 'বিশ্বের প্রথম নিরামিষাশী পেশাদার বডিবিল্ডার' হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সম্পূর্ণ নিরামিষ আহারের মাধ্যমেও যে বিশ্বমানের শরীর তৈরি করা সম্ভব, তা তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন। এই কৃতিত্ব তাকে প্রথম ভারতীয় হিসেবে 'আইএফবিবি প্রো কার্ড' অর্জনের সুযোগ করে দেয়।
তাঁর এই বিরল সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নজর কেড়েছিল। বডিবিল্ডিংয়ের মঞ্চ থেকে তিনি পা রাখেন রূপোলি পর্দায়। ২০১২ সালে পাঞ্জাবি ছবি 'কাবাডি ওয়ান্স এগেইন'-এর মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক হয়। এরপর তিনি বলিউডেও নিজের জায়গা করে নেন। ২০১৪ সালে তিনি 'রোর: টাইগার্স অফ দ্য সুন্দরবনস' এবং ২০১৯ সালে সিদ্ধার্থ মালহোত্রা অভিনীত 'মারজাভা'র মতো ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন।
তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছবি হল ২০২৩ সালের ব্লকবাস্টার স্পাই থ্রিলার 'টাইগার ৩'। এই ছবিতে তিনি বলিউডের সুপারস্টার সলমন খানের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন। ছবিতে তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি দর্শকের দারুণ প্রশংসা লাভ করে।
তিনি নিয়মিতভাবে তাঁর অনুরাগীদের জন্য ওয়ার্কআউট ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতেন। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা এক মিলিয়ন অতিক্রম করেছিল, যা ফিটনেস ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা প্রচারে তাঁর বিশাল প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। বরিন্দরের এই অকাল প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে বিনোদন ও ক্রীড়া জগতে।
