নিজস্ব সংবাদদাতা: সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরেই তুমুল কটাক্ষের মুখে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। 'মালিক' ছবির সাংবাদিক সম্মেলনে এক বাঙালি সাংবাদিককে ‘কেন বাংলা ভাষায় প্রশ্ন করছেন?’— তাঁর এই মন্তব্যের পরই শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। অনেকেই অভিযোগ তোলেন, জাতীয় মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের মাতৃভাষা ‘বাংলা’কে অবমাননা করেছেন 'বুম্বাদা'! ট্রোল, কটাক্ষ, এমনকী অভিনেতাকে বয়কটের ডাকও ওঠে।

 

বিশেষত, একই মঞ্চে বাংলা প্রশ্ন শুনে রাজকুমার রাও সকলের সুবিধার্থে হিন্দিতে অনুবাদ করে দেওয়ায় সমাজমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন— ‘এটাই কি উচিত ছিল না বুম্বাদারও?’ মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন এতদিন, অবশেষে নিজেই মুখ খুললে অভিনেতা। সরাসরি জানালেন নিজের অবস্থান, ক্ষোভ, ও কষ্টের কথা।

 

নিজের ভাষাকে অসম্মান? “দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না”— স্পষ্ট করে লিখলেন প্রসেনজিৎ। সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা পোস্টে প্রসেনজিৎ লেখেন—“কিছুদিন ধরে একটা সেন্টেন্স নিয়ে যা চলছে, তাতে কিছু বলতেই হচ্ছে। আমি ৪২ বছর ধরে বাংলায় কাজ করছি। সম্প্রতি কিছু জাতীয় স্তরের প্রজেক্টে কাজের সুযোগ পেয়েছি। ওইদিন  সাংবাদিক সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বাংলায় প্রশ্ন করায় আমি বলেছিলাম, কেন বাংলা ভাষায় প্রশ্ন করছেন। কারণ সেখানে অনেকেই বাংলা বোঝেন না, আমি যদি বাংলায় উত্তর দিই, হয়তো ঠিকভাবে তা কেউ বুঝবেন না। সেই কারণে ওই প্রশ্ন করেছিলাম।"

 


তিনি আরও লেখেন— “একটা বাক্য তুলে ধরে অনেকেই হয়তো আঘাত পেয়েছেন। আমিও কষ্ট পেয়েছি, এখনও পাচ্ছি। কারণ নিজের মাতৃভাষাকে অসম্মান করার কথা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। বাংলা আমার প্রাণের ভাষা। ভালবাসার ভাষা। বাংলার মানুষের বিচার চিরকাল আমার কাছে শিরোধার্য ছিল, থাকবে।"

 


শেষে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি— “আমার কথায় যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি দুঃখিত। এই পুরো ঘটনার ব্যাখ্যাটা আপনাদের জানালাম। ভাল থাকবেন।”

 

বাঙালিরা গর্ব করেন, যখন তাঁদের প্রিয় নায়ক বলিউডে কাজ করেন। কিন্তু সেই মঞ্চেই যদি বাংলাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনিই, তখন যে বাঙালিরাই কষ্ট পান— সেটাও যেন বুঝেছেন বুম্বাদা। তাই বিনম্র ভঙ্গিতে ক্ষমা চেয়েছেন।

 

এই ঘটনার পরে ট্রোলিং থামবে কি না, সেটা সময় বলবে। তবে টলিউডে প্রসেনজিতের অবদান ভুলে যাওয়া এক কথায় অন্যায়। তারকা হোক বা সাধারণ মানুষ— মাতৃভাষা নিয়ে ভুল হলে, তার সংশোধনের সুযোগ দেওয়াটাই তো বাংলার সংস্কৃতি।