এ গল্প অমিতাভ বচ্চনের নয়। নয় রেখার কিংবা পরিচালক যশ চোপড়ার। বরং বলিপাড়ার এক সময়ের সুপারহিট নায়িকা পরভিন ববির। আরব সাগরের তীরে তুফান তুলেছিলেন সেই নায়িকা। যাঁর গ্ল্যামারের ছটায় মোহিত হয়েছে তামাম সিনেদুনিয়া। অথচ কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকার সময়ই আচমকা হারিয়ে যান এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী।


১৯৮১ সাল—যশ চোপড়া চেয়েছিলেন এমন একটি সিনেমা বানাতে যা বলিউডের ইতিহাসে বয়ে আনবে এক নতুন বিতর্কের ঢেউ। বিষয়? বিবাহ বহিৰ্ভূত সম্পর্ক—যা তখনকার মূলধারার হিন্দি ছবিতে প্রায় নিষিদ্ধ ভাবনা। ছবির নাম ছিল ‘সিলসিলা’। শুরুতে কাস্টিং হয় তিন তারকাকে নিয়ে—অমিতাভ বচ্চন, পরভিন ববি এবং স্মিতা পাটিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কাস্টিং বদলে গিয়ে আসে রেখা এবং জয়া বচ্চন। সেই বদলের পেছনের গল্পটাই আজও বলিউডের অন্যতম বড় রহস্য।

 

সম্প্রতি সাংবাদিক ও লেখক হানিফ জাভেরি ‘মেরি সহেলি’ এক পডকাস্টে জানালেন, বদলের আসল কারণ ছিল পরভিন ববির ক্রমশ অবনতি হওয়া মানসিক স্বাস্থ্য। তাঁর মতে, এই পরিবর্তনের পর্দার আড়ালে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন—তবে কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষে নয়, বরং ছবিকে রক্ষা করার জন্য।

 

হানিফের বর্ণনা অনুযায়ী, ‘সিলসিলা’ শুরু হওয়ার সময় পারভিন ববি এতটাই অতি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছিলেন যে তিনি নিজের কস্টিউম সবসময় সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন। এমনকি কাশ্মীরে ‘কালিয়া’-র শুটিংয়েও তিনি ‘সিলসিলা’র পোশাক বয়ে নিয়ে যান, এই ভেবে যে মুম্বইতে চুরি হয়ে যেতে পারে। সিনেমাটোগ্রাফার পরভিন ভাট তাঁর এই আচরণ দেখে প্রথম বুঝতে পারেন কিছু একটা ঠিক নেই।

 

পরের ঘটনাটা ছিল আরও উদ্বেগজনক—‘কালিয়া’ শুটিংয়ের সময় পারভিন ববি নাকি হাঁটার বদলে হাঁটু গেড়ে হামাগুড়ি দিয়ে ভাটের ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন, কারণ তিনি মনে করছিলেন, হাঁটলে পড়ে যাবেন। এই ঘটনার পর নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনি গুরুতর মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

 

অমিতাভ বচ্চনও কাশ্মীরের শুটিং চলাকালীন পারভিনের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। তিনি যশ চোপড়াকে ফোন করে কাশ্মীরে ডাকেন। যশ এসে দেখেন পরভিনের গাল ফুলে আছে—সম্ভবত অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে। যশ ও অমিতাভ ভয় পেয়ে যান যে, শুটিং চলাকালীন যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তাহলে পুরো ছবি থমকে যাবে।

 

শেষমেশ, যশ চোপড়া ও অমিতাভ মিলে একটি গল্প সাজান—পরভিনকে বলা হয় চিত্রনাট্য বদলে গিয়েছে এবং তাঁর চরিত্র অনেক ছোট হয়ে গেছে। এই অজুহাতে তাঁকে বাদ দেওয়া হয় এবং নেওয়া হয় জয়া বচ্চনকে। এই ঘটনা পরভিনের মনে গভীর আঘাত হানে। তখন থেকেই নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে—অমিতাভ নাকি ব্যক্তিগত কারণে তাঁকে সরিয়েছেন। কিন্তু হানিফের দাবি, “যদি অমিতাভ কাস্টিং বদলেও থাকেন, সেটা শুধু ছবির স্বার্থে।”

 

এমনকি অভিনেতা রণজিতও এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, কাশ্মীরে একদিন পারভিন কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে বলেন—তিনি ‘সিলসিলা’র নায়িকা ছিলেন, কিন্তু একটি ‘রসালো’ বিতর্কের কারণে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়, আর তাঁর জায়গায় আনা হয় জয়া বচ্চন ও রেখাকে।

 

বিতর্ক এখানেই থামেনি। পরভিন ববি পরে অমিতাভের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগও করেছিলেন!  ‘সিলসিলা’ পর্দায় যতটা রোম্যান্টিক ছিল, তার নেপথ্যের গল্প ছিল ততটাই ঝড়ো, রহস্যময় এবং করুণ।

 

এর বহু বছর পর এক দিন বাড়ির বন্ধ দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় তাঁর নিথর দেহ। বি টাউনের এক সময়ের সেই মোহময়ী নায়িকা পরভিন ববির জীবন এবং মৃত্যু— যে কাহিনি ঘিরে এখনও কৌতূহলের অন্ত নেই।