২৪ জুলাই, ১৯৮০। প্রয়াত হয়েছিলেন উত্তমকুমার। এরপর কেটে গিয়েছে ৪৫ বছর। আজও বাঙালি ছবিপ্রেমী দর্শকের হৃদয়ে স্বমহিমায় জ্বলজ্বল করেন উত্তম। আর তাই তো বাংলা সিনেমার কথা যেখান থেকে শুরু সেই শুরুতেও উত্তম, শেষেও উত্তম। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হয় ‘মহানায়ক সম্মান’।
এবছর মহানায়ক শ্রেষ্ঠ সম্মান পেলেন বাংলা সিনেমার অন্যতম পরিচালক গৌতম ঘোষ। মহানায়ক সম্মান পেলেন সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচী, ইমন চক্রবর্তী, অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী। তবে শুধুই অভিনেতা বা সঙ্গীতশিল্পী নয়, মহানায়ক সম্মান পেলেন রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু এবং শিল্প নির্দেশক আনন্দ আঢ্য। এদিন পুরস্কার প্রদান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা চক্রবর্তী, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল সেন, ববি হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, স্বরূপ বিশ্বাস, সৌমিতৃষা কুণ্ডুর মতো ব্যক্তিত্বরা।
এদিন মঞ্চে থাকা তারকাদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সৌমিতৃষা কুণ্ডুর নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে কয়েকবার হোঁচট খান। প্রথমে সৌমিত্র, তারপর সৌমিরিষা, শেষে সৌমিতৃষা বলেন তিনি। নায়িকার নাম ধরে ডাকতে অসুবিধা হতেই মজার ছলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বাপরে এত বড় নাম! নিশ্চয়ই ছোটবেলায় উচ্চারণ করতে খুব অসুবিধায় পড়েছিলে? এত বড় নামের জন্য তো আমাদেরও অসুবিধা হচ্ছে!"
এরপর তাঁর কথায়, 'সিরিয়াল যারা করবেন তাঁদের বলব। এখন দেখি সিরিয়ালগুলো এ ওকে বিষ দিচ্ছে, ও ওকে বিষ দিচ্ছে। আর একটা পরিবারে তিনজন ঝগড়া করছে। একটা রিয়েল ক্যারেক্টার তো দুটো ঝগরুটে ক্যারেক্টার। আর আজেবাজে জিনিসগুলো শেখাচ্ছে। এতে কিন্তু সমাজে বাচ্চারা ভুল করেছে। অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।'
সিরিয়াল নির্মাতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমি সমস্ত টিভি সিরিয়ালের মালিকদের বলব, এটা যারা মালিক তাঁদের হাতে আছে। দয়া করে খারাপ কিছু শেখাতে যাবেন না। আর সিরিয়াল বাড়াতে হবে বলে রোজ গুন্ডামি। বাড়ান ভালো জিনিস দিয়ে, কত ইনোভেটিভ ভালো জিনিস আছে। তা না করে কী করবে, ও ওকে গুলি করছে, ও ওকে বন্দুক ধরছে। আমি যখনই দেখি বন্ধ করে দিই। অন্যরা কী করে জানিনা। সারাদিন আমরা কাজে-কর্মে ব্যস্ত থাকি। আমরা কী টেনশন করব। ওটা টেনশনের জিনিস না, রিল্যাক্সেশনের জিনিস।'
আরও পড়ুন: বাংলা ছবির জগতে 'মহানায়ক' সম্মান পেলেন গার্গী-গৌতম-ইমন-রূপঙ্কর, তালিকায় রয়েছেন আর কারা?
এবার বাংলার সিরিয়ালগুলিতে বাংলা গানকে প্রাধান্য দেওয়ার বার্তা দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রয়াণ দিবসে সরকার আয়োজিত শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য ধনধান্য সভাগৃহে উপস্থিত ছিলেন মমতা। সেখান থেকেই তিনি ফের ‘ভাষা সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ তুলে সরব হন। তাঁদের অভিযোগ, "বাংলা ভাষায় যাঁরা কথা বলেন, তাঁদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে।" বাংলা ভাষাকে রক্ষার জন্য সব স্তরে আন্দোলনের প্রয়োজন, এদিন সেই বার্তাই দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের সমর্থনে একজোট হয়েছিলেন টলি তারকারাও।
‘বাংলা সিরিয়ালে বাংলা গান আর কোথায়?’ টলিউডের সিরিয়ালগুলিতে বাংলা গান ব্যবহার করার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "টলিউডে বাংলা গানের ব্যবহার বেশি হোক। এখানে গান তৈরি করার জন্য অনেক শিল্পী রয়েছেন। এখন যাঁরা গান লেখেন, তাঁদের অনেকেই সুরও দেন। অন্য ভাষাকে অসম্মান করতে বলছি না। নিশ্চয়ই হিন্দি গানের ব্যবহার করা হবে। কিন্তু ডাবিং করতে গিয়ে যেন অরিজিনালটাকে ভুলে না যাই। বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে কিছু করতে পারব না। সব ভাষার সমন্বয় হোক, ঐক্য তৈরি হোক।" তিনি আরও বলেন, "আগে যে গানগুলো শুনতাম, তা আজও আমাদের ঠোঁটস্থ। আজ বাংলা গানের চল টিভি সিরিয়ালে অনেকটাই কম। সব ভাষার গানই সুন্দর। কিন্তু স্বর্ণযুগের বাংলা গানের বাজার কোনওদিন ফুরোবে না। বাংলা গানের ভাষা, কথা, সুর একটু ভেবে দেখুন তো!"
