বলিউডের 'কমেডি কিং' জনি লিভার ফের প্রমাণ করলেন, কেন তিনি হাসির মঞ্চে আজও অপ্রতিরোধ্য। সম্প্রতি, এক শো-তে হাজির হয়ে, আজকের অভিনেতা আর স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ানদের কড়া ভাষায় খোঁচা দিলেন তিনি।

“আজকের দিনে গালিগালাজ করাটাই যেন ফ্যাশন!” গর্জে উঠলেন এই বর্ষীয়ান কৌতুকাভিনেতা।  জনি বলেন, “হলিউড ছবির প্রভাবেই এখনকার অনেকেই খোলামেলা গালি দেয়, কুরুচিকর মজায় ভরিয়ে তোলে চিত্রনাট্য। ইংরেজি ছবি দেখে দেখে তাঁদের অভ্যেস হয়ে গেছে— ভাবে, ‘চলবে, কী এমন ব্যাপার!’ সেই থেকেই ডাবল মিনিং জোকস ছড়িয়ে পড়েছে।”

"আমরাও পারি, কিন্তু করি না!" — স্ট্যান্ড-আপদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা জনির। দৃঢ়ভঙ্গিতেই, খোলামেলা চ্যালেঞ্জ জনির, “আজকালকার স্ট্যান্ড-আপদের কনটেন্টে কুরুচিকর ইঙ্গিত না থাকলে চলে না। কিন্তু আমাদের সময় শেখানো হতো— ওই রাস্তায় যেও না। আজ যদি আমরাও কুরুচিকর ইঙ্গিতপূর্ণ জোকস বলা শুরু করি, তাহলে ওরা দাঁড়াতে পারবে না সামনে। কিন্তু করিনি, করবও না। কারণ আমার একটা ফ্যামিলি-অডিয়েন্স আছে, আমার দায়িত্ব আছে।” জনি আরও বলেন, “তোমরা সত্যিই প্রতিভাবান? তা হলে পরিষ্কার কথায়, বিনা গালিতে হাসিয়ে দেখাও। তখন বুঝব কত ধানে কত চাল!”

আসলে, আজও জনি লিভার মানেই নস্ট্যালজিয়া আর নিখাদ হাসি।  ‘বাজিগর’, ‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘দুলহে রাজা’ থেকে ‘গোলমাল ৩’, ‘বাদশা’— কমেডির মানচিত্রে একের পর এক সোনালি মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন জনি। সোজা সাপটা রসিকতা আর নিখুঁত টাইমিং— এটাই তাঁর ইউএসপি। সম্প্রতি তাঁকে দেখা গেছে ‘হাউসফুল ৫’-এ, যা বিশ্বজুড়ে ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।

এখন তাঁকে দেখা যাবে ‘ওয়েলকাম টু দ্য জঙ্গল’ ছবিতে, যেখানে আছেন অক্ষয় কুমার, সুনীল শেট্টি, সঞ্জয় দত্ত, আরশাদ ওয়ারসি, লারা দত্ত, রাভিনা ট্যান্ডন, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ ও দিশা পাটানির মতো তারকারা। আহমেদ খানের পরিচালনায় ছবিটি মুক্তি পাবে এই বছরের ডিসেম্বরেই।

জনি লিভার আবারও বুঝিয়ে দিলেন— কমেডি শুধু শব্দে নয়, শিল্পেও হতে পারে। এবং সেটাই সত্যিকারের কমেডির চ্যালেঞ্জ।

 

 

প্রসঙ্গত, জনি নিজেও এক সময় এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। সম্প্রতি প্রাক্তন অভিনেত্রী কুনিকা সদানন্দের একটি পডকাস্টে তিনি নিজের ছেলের জীবনের ভয়ংকর এক অধ্যায়ের কথা শেয়ার করেন।


জনি জানান, তার ছেলে জেসির মাত্র ১০ বছর বয়সে ঘাড়ে একটি টিউমার ধরা পড়ে। একাধিক চিকিৎসার পরও ভারতীয় চিকিৎসকেরা জানান, টিউমারটি স্নায়ুর সঙ্গে জড়িত হওয়ায় অপারেশন করা সম্ভব নয়। তাঁরা সতর্ক করে দেন, অপারেশনের চেষ্টা করলে জেসির দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে কিংবা সে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। জনি বলেন, “আমি আমার ছেলেকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখতাম, কাঁটা জায়গাগুলো তখনও খোলা থাকত। ডাক্তাররা প্রতিদিন তাকে ৪০-৫০টি ওষুধ দিতেন, কিন্তু টিউমার কমার বদলে ক্রমশ বাড়তে থাকে।”

এই সময় জনি নিজেকে সম্পূর্ণ অসহায় মনে করতেন। একদিন তিনি ছেলেকে বলেন, “আমি একজন বাবা হিসেবে তোমার জন্য সব কিছু করব, কিন্তু আমি তো ঈশ্বর নই,আমি এই টিউমার সারাতে পারব না।” জেসি তখনও শিশু, মাত্র ১২ বছর বয়স। স্কুলে তাকে নিয়ে সহপাঠীরা ঠাট্টা করত। এই কঠিন সময়ে জনি ছেলের জন্য সব কিছু করতেন। যা চাইত সে, তাই কিনে দিতেন, যেখানেই যেতে চাইত, সেখানে নিয়ে যেতেন।অবশেষে অপারেশন সফল হয়। ডাক্তাররা পুরো টিউমারটি অপসারণ করতে সক্ষম হন।পরে জনি লিভার বলেন, ছেলের এই সুস্থতার পর তিনি নিজের সব খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করেন এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান এই দ্বিতীয় সুযোগের জন্য। আজ জেসি পুরোপুরি ক্যান্সারমুক্ত এবং তিনি একজন অভিনেতা হিসেবে কাজ করছেন।