নিঃসন্দেহে একটি যুগের অবসান। প্রাক্তন রেসলিং আইকন ও অভিনেতা হাল্ক হোগ্যান ৭১ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন। ২৪ জুলাই, ফ্লোরিডার ক্লিয়ারওয়াটার-এ নিজ বাসভবনে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে বিশ্বজুড়ে ক্রীড়া ও বিনোদন জগতে।
এই খবরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন ‘রকি’ খ্যাত সিলভেস্টার স্ট্যালোন। ইনস্টাগ্রামে একটি পুরনো ছবি পোস্ট করে স্ট্যালোন লিখেছেন, “আমি তখনই বুঝেছিলাম, ও একজন অবিশ্বাস্য শোম্যান ও দুর্দান্ত প্রতিভা। মাত্র ২৬ বছর বয়সে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল ‘রকি থ্রি’ ছবির সময়। আমার হৃদয় আজ ভেঙে গেছে… বিশ্বাসই হচ্ছে না ও আর নেই।”
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Sly Stallone (@officialslystallone)
১৯৮২ সালের বিশ্ববিখ্যাত সিনেমা 'রকি' সিরিজের তিন নম্বর ছবি ‘রকি ৩’ (Rocky III)-তে অভিনয়ের মাধ্যমেই হলিউডে পা রাখেন হাল্ক হোগ্যান। ছবিতে তিনি ছিলেন ‘থান্ডারলিপস’ নামে এক রেসলিং চ্যাম্পিয়ন, যিনি দাতব্য প্রদর্শনী ম্যাচে লড়াই করেন রকির (স্ট্যালোন) বিরুদ্ধে। ছবিটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পায় এবং হাল্ক হোগানকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
হাল্ক হোগ্যানের আসল নাম ছিল টেরি জিন বোলিয়া। শুধু রিংয়ে নয়, বাস্তবেও স্ট্যালোন ও হোগান দীর্ঘ চার দশকের বন্ধুত্ব ভাগ করে নিয়েছিলেন। স্ট্যালোন একাধিকবার স্মৃতিচারণ করেছেন হোগানের সঙ্গে কাটানো সেই শুটিংয়ের দিনগুলো। একটি পুরনো পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “কে জানত আমি একদিন ৩১০ পাউন্ডের ইনক্রেডিবল হাল্ক হোগানকে মাথার উপর তুলে ফেলব!”
এছাড়া ২০২৪ সালে স্ট্যালোন আরও একবার লিখেছিলেন, “হাল্ক ছিল একজন দুর্দান্ত অ্যাথলিট। ওর ঘুষি এত নিখুঁত ছিল যে ওর হাতের মুঠির স্পর্শ আমি ত্বকে অনুভব করতাম, তবে ও শুটিংয়ে একেবারে ঠিক সময়েই থেমে যেত, আমার শরীর একচুল স্পর্শ করত না ওর হাত … অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণ!”
হাল্ক হোগ্যান ছিলেন ‘ডব্লিউ ডব্লিউ ই’ (WWE)-র ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন। ১৯৮০-র দশকে ডব্লিউ ডব্লিউ ই-কে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন তিনিই। তাঁর মৃত্যুতে ডব্লিউ ডব্লিউ ই-র তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে,
“পপ কালচারের অন্যতম সেরা মুখ হাল্ক হোগ্যানের প্রয়াণে ডব্লিউ ডব্লিউ ই গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর পরিবার, বন্ধু ও ভক্তদের প্রতি রইল সমবেদনা।”
হাল্ক হোগ্যান রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী স্কাই ডেইলি এবং দুই সন্তান, ব্রুক ও নিক হোগানকে।হোগানের মতো কিংবদন্তি একবারই জন্মান — তাঁর রিংয়ের গর্জন থেমে গেলেও স্মৃতি থেকে কখনও মুছে যাবেন না তিনি।
প্রসঙ্গত, ‘রকি ৩’ ছবির হাল্ক হোগ্যানের শুটিংয়ের গল্পে একবার ফিরে তাকানো যাক। ১৯৮১ সাল। রকি ৩ছবির জন্য এক বিশেষ রেসলিং সিকোয়েন্সের শ্যুট চলছিল, যেখানে সিলভেস্টার স্ট্যালোন-এর চরিত্র ‘রকি বালবোয়া’-র বিরুদ্ধে রিংয়ে নামেন হাল্ক হোগ্যান ‘থান্ডারলিপ্স’ নামে এক বিশালদেহী রেসলিং চ্যাম্পিয়ন হিসাবে।
এই দৃশ্য শ্যুট করার সময় হাল্ক ছিলেন ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা এবং প্রায় ৩১০ পাউন্ড ওজনের। স্ট্যালোন পরে বলেছিলেন, “৩১০ পাউণ্ডের ওজনের হাল্ক হোগ্যানকে দু'হাতে তুলে ছুড়ে ফেলব আমি, স্বপ্নেও কেউ কোনওদিনও ভেবেছিল! আর ওই যে কাণ্ডটা করেছিলাম তার ফলস্বরূপ আমার পিঠ, কোমরে আজও টনটনে ব্যাথা!!”
কিন্তু সবথেকে চাঞ্চল্যকর ব্যাপার ছিল হাল্কের ঘুষির নিখুঁত সময়জ্ঞান। রেসলিং দৃশ্য শ্যুট করার সময় হাল্ক যে ঘুঁষিগুলো মারছিলেন, তা নিখুঁতভাবে সময়মতো থেমে যেত, কিন্তু তার স্পর্শ এতটাই বাস্তব লাগত যে স্ট্যালোন রীতিমতো কেঁপে যেতেন! স্ট্যালোন নিজেই বলেছিলেন সেকথা।
আরও মজার বিষয়, প্রথমবার যখন হাল্ক হোগ্যান শ্যুটিং সেটে এলেন, তখন তাঁর চেহারা দেখে সবাই রীতিমতো স্তব্ধ! স্ট্যালোন নাকি রসিকতা করে বলেছিলেন, “ওরে বাবা রে, ও আদৌ মানুষ তো? দৈত্য তো পুরো!” এমনকী, শুটিংয়ের সময় একটানা কয়েকবার টেক নেওয়াতে হাল্ক একটি দৃশ্যে সত্যিই স্ট্যালোনকে রিংয়ে ছুড়ে ফেলেছিলেন, এবং সেটার পর স্ট্যালোনের পিঠে হালকা চোটও লাগে। কিন্তু স্ট্যালোন পরে মজা করে বলেন, “ হায় রে! শুধু চেয়েছিলাম দৃষ্টা যথাসম্ভব বাস্তব লাগুক, তাই হল!” এই দৃশ্যটি শুধু ‘রকি ৩’-র সবচেয়ে অ্যাকশন-প্যাকড সিকোয়েন্সই নয়, বরং সেটাই তৈরি করে দিয়েছিল স্ট্যালোন-হোগ্যান বন্ধুত্বের সূচনা — যা চার দশক টিকে যায় বাস্তব জীবনেও।
‘থান্ডারলিপ্স’ ভার্সেস ‘রকি’ – এই লড়াই ছিল যেমন শৈল্পিক, তেমনই স্মরণীয়। আর এই দৃশ্যই আজ কিংবদন্তি হয়ে আছে সিনেমার ইতিহাসে।