বলিউডের লেডি সুপারস্টার দীপিকা পাড়ুকোন অবশেষে পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গার ছবি ‘স্পিরিট’ এবং বিপুল প্রতীক্ষিত ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি'র সিক্যুয়েল থেকে তাঁর বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক প্রসঙ্গে মুখ খুললেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি কোনও ব্যক্তির নাম না নিলেও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা লিঙ্গভিত্তিক 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' বা দ্বিমুখী নীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন।

 

 

 

 

দীপিকার এই দুটি বড় প্রোজেক্ট থেকে সরে যাওয়ার পিছনে মূল কারণ হিসেবে যে খবরটি উঠে এসেছিল, তা হল— কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে তিনি দৈনিক নির্দিষ্ট আট ঘণ্টা কাজের সময়সীমা দাবি করেছিলেন। ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরে এই খবরটি ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।

 

 

 

 

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে কথা বলার সময় দীপিকা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র একজন নারী হওয়ার কারণে যদি এই দাবিকে অতি-উদ্যোগী বা অতিরিক্ত হিসেবে দেখা হয়, তবে তাই হোক। কিন্তু এটা কোনও গোপন বিষয় নয় যে ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির বহু পুরুষ সুপারস্টার বছরের পর বছর ধরে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করছেন এবং তা কখনও শিরোনামে আসেনি!”

 

 

 

 

তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, “আমি এখন নাম নিতে চাই না, এতে পুরো বিষয়টা অন্য দিকে মোড় নেবে, কিন্তু এটা সর্বজনবিদিত যে বহু পুরুষ অভিনেতা বছরের পর বছর ধরে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করছেন। তাঁদের অনেকেই সোম থেকে শুক্র মাত্র আট ঘণ্টা কাজ করেন। তাঁরা সপ্তাহান্তে একেবারেই কাজ করেন না।” দীপিকার এই মন্তব্য বলিউড ইন্ডাস্ট্রির কাজের সংস্কৃতিতে নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্ন নিয়মের বিষয়টি সামনে এনেছে।

 

 

 

 

তাঁর এই বিতর্কিত প্রস্থানের মধ্যে রয়েছে 'কল্কি ২৮৯৮ এডি'-র সিক্যুয়েল থেকে বেরিয়ে আসা। গত মাসেই ছবির প্রযোজকরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে দীপিকা পাড়ুকোন পরবর্তী সিক্যুয়েলের অংশ হচ্ছেন না। তাঁদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, "আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছি যে দীপিকা পাড়ুকোন কল্কি ২৮৯৮ এডির আসন্ন সিক্যুয়েলের অংশ হবেন না। সতর্ক বিবেচনার পর, আমরা আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথম ছবিটি তৈরি করার দীর্ঘ যাত্রা সত্ত্বেও, আমরা একটি অংশীদারিত্ব খুঁজে পেতে অক্ষম ছিলাম।" যদিও বিবৃতিতে সরাসরি কারণ বলা হয়নি, তবে সূত্রের খবর, এই 'অংশীদারিত্ব খুঁজে না পাওয়া' তাঁর আট ঘণ্টার কাজের সময়সীমা সংক্রান্ত অনুরোধের কারণেই।

 

 

আরও পড়ুন: বিদেশে থেকেও রীতি ভোলেননি প্রিয়াঙ্কা, করওয়া চৌথের আগে নিকের জন্য কী করলেন 'দেশি গার্ল'?

 

 

একইভাবে, সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গার ছবি ‘স্পিরিট’ থেকেও দীপিকার সরে যাওয়ার কারণ এটাই ছিল বলে জানা যায়। এই প্রস্থানের পর পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গা সমাজমাধ্যমে একটি রহস্যময় নোট পোস্ট করেছিলেষ। সেখানে তিনি তাঁর ছবির গল্প ফাঁস এবং এর পরিচালনা নিয়ে হতাশাও ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, পরে ওই ছবিতে দীপিকার জায়গায় অভিনেত্রী তৃপ্তি দিমরিকে কাস্ট করেন।

 

 

 

 

এই সমস্ত বিতর্ক এবং প্রোজেক্ট থেকে সরে আসা সত্ত্বেও, দীপিকা পাড়ুকোন এগিয়ে চলেছেন। তিনি ইতিমধ্যেই শাহরুখ খানের সঙ্গে তাঁর ষষ্ঠ ছবি ‘কিং’-এর শুটিং শুরু করেছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি ইনস্টাগ্রামে প্রথম দিনের শুটিংয়ের একটি আন্তরিক ছবি শেয়ার করেন, যেখানে তিনি শাহরুখ খানের হাত ধরে ছিলেন। একই সাথে তিনি একটি আবেগঘন নোট লেখেন, যেখানে তিনি শাহরুখের সাথে তাঁর দীর্ঘ ১৭ বছরের সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

 

 

 

 

 

তিনি তাঁর নোটে লেখেন, 'প্রায় ১৮ বছর আগে ‘ওম শান্তি ওম’-এর শুটিংয়ের সময় তিনি আমাকে যে প্রথম শিক্ষাটি দিয়েছিলেন, তা হল— একটি সিনেমা তৈরি করার অভিজ্ঞতা এবং যাদের সাথে আপনি এটি তৈরি করছেন, তা এর সাফল্যের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত এবং তখন থেকে নেওয়া আমার প্রতিটি সিদ্ধান্তে সেই শিক্ষাই প্রয়োগ করেছি। আর সম্ভবত এই কারণেই আমরা আমাদের ষষ্ঠ ছবিটি একসঙ্গে তৈরি করতে চলেছি।"

 

 

 

 

এইভাবেই ব্যক্তিগত কাজের জীবনের ভারসাম্য এবং ইন্ডাস্ট্রির 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' নিয়ে প্রশ্ন তুলে দীপিকা পাড়ুকোন একদিকে যেমন আলোচনা তৈরি করেছেন, অন্যদিকে তেমনি শাহরুখ খানের সঙ্গে নতুন কাজের মাধ্যমে নিজের পেশাগত জীবনে স্থিতাবস্থা বজায় রেখেছেন।