আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্তমান সময়ে শিশুর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনযাত্রার খরচ যেভাবে ক্রমাগত বাড়ছে, তাতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা আর বিলাসিতা নয়, বরং অপরিহার্য। তাই বাবা-মায়েদের এমন বিনিয়োগপথ বেছে নিতে হবে যা ঝুঁকি কম, তবে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল মুনাফা নিশ্চিত করতে সক্ষম। এক্ষেত্রে সরকার-সমর্থিত স্কিম থেকে শুরু করে নিরাপদ ডিপোজিট—বিভিন্ন বিকল্পই হাতের কাছে রয়েছে। নিচে তিনটি স্মার্ট বিনিয়োগপথ নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা শিশুর ভবিষ্যৎকে আরও সুরক্ষিত করতে সাহায্য করতে পারে।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা (SSY) হল কন্যাশিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষার অন্যতম জনপ্রিয় সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে চালু হওয়া এই প্রকল্পে কর সুবিধা তো আছেই, পাশাপাশি ছোট সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সুদের হার দেওয়া হয়। বর্তমানে SSY–তে সুদের হার ৮.২ শতাংশ, যা দীর্ঘমেয়াদে অত্যন্ত লাভজনক বলে বিবেচিত।
মাত্র ২৫০ টাকার ন্যূনতম জমা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। অ্যাকাউন্ট খোলার ২১ বছর পর এই স্কিম পরিপক্ব হয়, ফলে উচ্চশিক্ষা, বিদেশে পড়াশোনা বা বিয়ের মতো বড় খরচের জন্য এটি আদর্শ সঞ্চয় বিকল্প। নিরাপদ, সরকার-সমর্থিত এবং উচ্চ সুদের হার—এই তিনের সংমিশ্রণে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা কন্যাশিশুর ভবিষ্যৎ গঠনে এক শক্তিশালী আর্থিক হাতিয়ার।
শিশুদের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট (FD)
কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ বলতে আজও বেশিরভাগ পরিবারের প্রথম পছন্দ ‘ফিক্সড ডিপোজিট’। ধারাবাহিক ও নিশ্চয়তা–সম্পন্ন রিটার্ন এবং সঞ্চয় হিসাবের তুলনায় বেশি সুদ পাওয়ার সুবিধার জন্য FDs এখনও অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক ব্যাংক আবার শিশুদের জন্য বিশেষ FD স্কিমও চালু করেছে, যেখানে সাধারণ FD–র তুলনায় সুদের হার কিছুটা বেশি হয়।
এই ধরনের স্কিমে এককালীন টাকা বিনিয়োগ করলে নির্দিষ্ট সময়ে তা সুদসহ বেড়ে একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক সুরক্ষা তৈরি করে। অভিভাবকরা চাইলে স্কুলে ভর্তি, কোচিং, উচ্চমাধ্যমিকের খরচ বা অন্য যেকোনো মাঝারি–মেয়াদী লক্ষ্যের জন্য এমন FD–কে কাজে লাগাতে পারেন। ঝুঁকি কম এবং ফলাফল নিশ্চিত—এই দুই কারণে ফিক্সড ডিপোজিট শিশুদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আবশ্যিক একটি উপাদান হয়ে উঠেছে।
এনপিএস ‘বৎসল্য’ যোজনা
দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ গঠন করতে চাইলে এনপিএস বৎসল্য যোজনা এখন একটি অনন্য বিকল্প। এই স্কিমে বাবা-মা বা অভিভাবক নাবালক সন্তানের নামে একটি ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। সন্তান ১৮ বছর পূর্ণ করলে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাধারণ NPS অ্যাকাউন্টে রূপান্তরিত হয়।
এতে ন্যূনতম বার্ষিক বিনিয়োগ মাত্র ১,০০০ টাকা, তবে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের কোনও সীমা নেই। সুদের হার গড়ে ৯.৫–১০ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, যা দীর্ঘমেয়াদে অত্যন্ত লাভজনক। বহু বছর ধরে বিনিয়োগ ধরে রাখার ফলে চক্রবৃদ্ধি হারে অর্থ বৃদ্ধির সুবিধা পাওয়া যায় এবং খুব অল্প বয়স থেকেই শিশুর জন্য একটি শক্তিশালী অবসরের তহবিল তৈরি হতে থাকে।
সঠিক স্কিম বেছে নেওয়ার মাধ্যমে বাবা-মায়েরা শিশুর ভবিষ্যৎকে আরও সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল করতে পারেন। সরকারি সুরক্ষা, কর সুবিধা, কম ঝুঁকি ও চক্রবৃদ্ধি হারে প্রাপ্ত মুনাফা—সব মিলিয়ে এই স্কিমগুলোর সমন্বয় শিশুদের জন্য শক্ত ভিত্তি গড়ে দিতে সক্ষম। শুরুটা যত তাড়াতাড়ি হবে, ভবিষ্যৎ ততটাই উজ্জ্বল হবে।
