আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে উৎসবের মরশুমে সাধারণত সোনার চাহিদা বাড়ে। তবে, এই বছর, রূপোও নজর কাড়তে পারে। বিশ্বব্যাপী চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গেই রূপোর দাম রেকর্ড হারে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। রূপোর দাম চলতি বছরে প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গৃহস্থালি থেকে শুরু করে শিল্প এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছেও রূপোর গুরুত্ব বেড়েছে।
ভারতে, রূপোর দাম প্রতি কেজিতে প্রায় ১,৫০,০০০ টাকা ছুঁয়েছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ। শিল্প চাহিদা, সরবরাহের ঘাটতি এবং নিরাপদ ক্রয় হিসেবে এই বছর রূপো সোনা এবং অন্যান্য বেশিরভাগ পণ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
অগমন্ট - গোল্ড ফর অল-এর গবেষক প্রধান ড. রেনিশা চৈনানির মতে, পরিস্থিতি এমন থাকলে অদূর ভবিষ্যতে রূপোর দামও চড়চড়িয়ে ঊর্ধ্বমুখী হবে।। তিনি বলেন, "রূপোর দাম ৫০ ডলার (প্রায় ১,৫০,০০০ টাকা) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। যদি রূপোর দাম এই স্তরে বা তার উপরে থাকে, তাহলে পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ ডলার (প্রায় ১,৬৫,০০০ টাকা) ছোঁবে। তবে, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের রূপোর দাম কমে হয়েছিল সর্বনিম্ন ৪৬.৭০ ডলার (১,৪৪,০০০ টাকা)। যদি রূপোর দাম তার নীচে নেমে যায়, তাহলে এই ধাতুর চাহিদা এবারের উৎসব মরসুমে ৪-৫ শতাংশ বাড়বে বলে আসা করা যায়।"
ড. চাইনানি ব্যাখ্যা করেছেন যে, চাহিদা এবং সরবরাহ বাধার কারণে চলতি বছর রূপোর দাম প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড়েছে।
ড. রেনিশা চৈনানির কথায়, "রূপোর কেজি প্রতি দাম ৫০ ডলারের রেকর্ড স্পর্শ করা এবং তা টানা অষ্টম ধরে বজায় থাকা বিশ্ব বাজারের প্রবল চাপকে প্রতিফলিত করে। দাম ক্রমশ বাড়ায়, মজুদ হ্রাস পেয়েছে এবং রূপোর ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি ঐতিহাসিকভাবে দাম বৃদ্ধির দিক নির্দেশ করে, যেমন ২০১০-১১ সালে যখন রূপো প্রতি আউন্স ৫০ ডলারে পৌঁছেছিল। বর্তমান ব্যবস্থা সেই উত্থানের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে, কিন্তু এবার, উচ্চ শিল্প চাহিদা, বহু বছরের সরবরাহ ঘাটতি এবং দৃশ্যমান মজুদের আঁটসাঁট ভাব এই উত্থান পরিচালিত হচ্ছে।"
রূপার দাম কেন বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, আজ গহনা বা বিনিয়োগের বাইরেও রূপোর গুরুত্ব রয়েছে। সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক যানবাহন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হার্ডওয়্যার এবং ফাইভ-জি পরিকাঠামো-সহ বেশ কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তিতে এই ধাতু একটি মূল উপাদান।
এসএমসি গ্লোবাল সিকিউরিটিজের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট বন্দনা ভারতী বলেন, "রূপোর চাহিদা বাড়ছে, তবে সরবরাহের দিকটি এখনও বাধাগ্রস্ত। সোনার তুলনায় পুনর্ব্যবহারের মাত্রা কম এবং নতুন রূপোর খনিগুলি কাজ শুরু করতে ৭-৮ বছর সময় নেবে। এবার, এআই হার্ডওয়্যার, সৌরশক্তি এবং ফাইভ-জি থেকে চাহিদা বেড়েছে এবং এই ক্ষেত্রগুলিতে রূপোর কোনও বিকল্প নেই।"
তিনি আরও বলেন যে, এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিশ্বব্যাপী রূপোর ইটিএফ ক্রয়ের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতী বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপ এবং চীন- সর্বত্র রূপোর সরবরাহ কম। প্রকৃতপক্ষে, রূপো এখন ভবিষ্যতের তুলনায় তিন মার্কিন ডলার প্রিমিয়ামে লেনদেন করছে, যা অস্বাভাবিক। যা প্রমাণ করে যে, বাজার কতটা কঠিন।"
আরও পড়ুন- ক্রেডিট কার্ডে দীপাবলির কেনাকাটা? মারাত্মক বুমেরাং হতে পারে অফারগুলি! সতর্ক থাকুন
আরেকটি বড় পরিবর্তন হল রূপো একটি 'কৌশলগত ধাতু' হিসেবে স্বীকৃতি। বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি সোনার পাশাপাশি রূপো কিনতে শুরু করেছে— ধাতু এবং ইটিএফ উভয় আকারেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি রূপোকে একটি 'সংকটম খনিজ' হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে, যার ফলে দেশ এবং সংস্থাগুলি তাদের সরবরাহ সুরক্ষিত করতে তৎপর হয়েছে।
অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাদের রূপোর রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। রূপো এখন শিল্পের কাজে লাগে এবং কৌশলগত ধাতু হওয়ায় তার গুরুত্ব ও চাহিদা বেড়েছে। আমরাবর্তমান বাজারে ৫৫ ডলারের কাছাকাছি অবস্থান তৈরি হতে দেখছি, যার অর্থ এই উত্থান আরও কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বর্তমান স্তরে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। রূপোর বাজারে চরম টান এবং অস্থিরতার ফলে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এসএমসি গ্লোবাল সিকিউরিটিজের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট বন্দনা ভারতী বলেন, "বিনিয়োগকারীদের রূপaর ইটিএফ বা ধাতু মূল্য কেনার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে দাম স্থিতিশীল হতে পারে।"
