আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রতি মাসে নগদে বা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে স্ত্রীকে খরচের জন্য টাকা দেন, তাহলে সাবধান। আয়কর নিয়ম অনুসারে, এই টাকা আপনার আয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং কর দেওয়ার নোটিশ জারি হতে পারে। অনেকেই এই নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন। ফলে পরে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই জেনে নেওয়া যাক, আয়কর আইন এবং এই ধরনের জামেলা এড়াতে কী করা উচিত।

আয় একত্রিত করার নিয়ম-
ভারতীয় আয়কর আইনের নিয়ম অনুসারে ধারা 269SS এবং 269T অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, স্বামী যদি তাঁর স্ত্রীকে গৃহস্থালির খরচ বা উপহার হিসেবে নগদ অর্থ দেন, তাহলে তার উপর কোনও কর দায় নেই। এই পরিমাণ অর্থ স্বামীর আয় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং স্ত্রীর উপর কোনও কর আরোপ করা হয় না। কিন্তু যদি স্ত্রী এই অর্থ বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করেন (যেমন স্থায়ী আমানত, শেয়ার বাজার বা সম্পত্তি কেনা) এবং তা থেকে আয় করেন, তাহলে এই আয়ের উপর কর দিতে হবে। 

ধারা 269SS এবং 269T কী?
কালো টাকা বন্ধ করার জন্য ধারা 269SS এবং 269T ধারার মাধ্যমে নগদ লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ধারা 269SS অনুসারে ঋণ, আমানত বা অগ্রিম অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে ২০,০০০ টাকার বেশি নগদ গ্রহণ নিষিদ্ধ। যদি একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ২০ হাজার টাকার বেশি নগদ দেন, তাহলে তা অবশ্যই ব্যাঙ্কিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (যেমন চেক, এনইএফটি, আরটিজিএস) করতে হবে। ধারা 269T অনুযায়ী, যদি ২০ হাজার টাকার বেশি ঋণ ফেরৎ দিতে হয়, তাহলে তা ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রে, এই ধারাগুলি লঙ্ঘনের জন্য কোনও শাস্তি নেই, তবে স্বচ্ছতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

স্ত্রীকে দেওয়া অর্থের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম প্রযোজ্য?

পরিবারের খরচের জন্য
স্বামী তাঁর স্ত্রীকে গৃহস্থালির খরচের জন্য যেকোনও পরিমাণ অর্থ দিতে পারেন। এর উপর কোনও কর দায় নেই এবং এটা স্বামীর আয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিনিয়োগের জন্য
যদি স্ত্রী স্বামীর দেওয়া অর্থ দিয়ে কোনও বিনিয়োগ করেন, যেমন ফিক্সড ডিপোজিট, স্টক মার্কেট বা সম্পত্তি কেনা, তাহলে তা থেকে উৎপন্ন আয়ের উপর কর দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি স্ত্রীর বিনিয়োগ থেকে ১ লাখ টাকা আয় হয়, তাহলে তা স্বামীর আয়ের সঙ্গে যোগ হবে এবং কর ধার্য করা হবে।

ভাড়া থেকে আয়
যদি স্ত্রীকে দেওয়া অর্থ দিয়ে সম্পত্তি কেনা হয় এবং তা থেকে ভাড়া পাওয়া হয়, তাহলে এই ভাড়া স্ত্রীর আয় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার উপর কর ধার্য করা হবে।

উপহার কর বিধি
যদি স্বামী তাঁর স্ত্রীকে উপহার হিসেবে টাকা দেন, তাহলে তার উপর কর আরোপ করা হয় না। আয়কর আইন অনুসারে, স্বামী-স্ত্রীকে নিকটাত্মীয় হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় এবং উপহারের উপর কর ছাড় দেওয়া হয়।

কর নোটিশ এড়াতে উপায়-
-২০ হাজার টাকার  বেশি নগদ লেনদেন করবেন না।
- ব্যাঙ্কিং মাধ্যম (চেক, NEFT, RTGS) ব্যবহার করুন।
- স্ত্রীর করা বিনিয়োগ এবং তা থেকে প্রাপ্ত আয় সঠিকভাবে আয়কর রিটার্নে (ITR) লিপিবদ্ধ করতে হবে।
- স্ত্রী যদি সম্পত্তি, ফিক্সড ডিপোজিট বা অন্যান্য বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে সময়মতো তাঁর আয়ের উপর কর প্রদান করুন।

কখন কর নোটিশ আসতে পারে?
যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে করা নগদ লেনদেনে স্বচ্ছতা না থাকে, অথবা স্ত্রী সেই পরিমাণ থেকে অর্জিত আয় প্রকাশ না করে থাকেন, তাহলে আয়কর বিভাগ নোটিশ জারি করতে পারে। বিশেষ করে যদি অর্থ কর বাঁচাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে আয়কর বিভাগ ব্যবস্থা নিতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে সরাসরি করের কোনও নিয়ম নেই, তবে আয়কর আইনের বিধানগুলি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। নগদ লেনদেনে স্বচ্ছতা এবং সঠিক রেকর্ড রাখা হল কর নোটিশ এড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায়।