আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোনার ও রুপোর দামে ফের উত্থান দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তীব্র পতনের পর বিনিয়োগকারী ও জুয়েলাররা কম দামে ক্রয় বাড়ানোয় বাজারে পুনরায় গতি এসেছে। দীপাবলি ও আসন্ন বিয়ের মরশুমের আগে এই পুনরুদ্ধার ভারতীয় বাজারে নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতি নতুন করে আগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যিক উত্তেজনা কিছুটা কমেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা বাজারে অস্থিরতা সীমিত করেছে।
এমসিএক্সে সোনার বড় লাফ
মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ডিসেম্বর ডেলিভারির সোনার ফিউচার ৩,৫৮০ টাকা বা ২.৮২% বেড়ে ১,৩০,৫৮৮ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম হয়েছে। শুক্রবার সোনা সর্বকালের সর্বোচ্চ ১,৩২,২৯৪ টাকা ছুঁয়েছিল, কিন্তু দিনের শেষে ১,২৭,০০৮ টাকা-তে নেমে আসে, টানা পাঁচ দিনের র্যা লি থামিয়ে।
রুপোর ফিউচারও ফিরে এসেছে শক্ত অবস্থানে—ডিসেম্বর ডেলিভারির দাম ১,৫৭১ টাকা বা ১% বেড়ে ১,৫৮,১৭৫ টাকা প্রতি কেজি হয়েছে। গত সপ্তাহে এটি প্রায় ৬% পতন দেখেছিল।
আন্তর্জাতিক বাজারেও পুনরুদ্ধার
আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনা-রুপো দামে উত্থান দেখা যায়। ডিসেম্বর ডেলিভারির সোনার ফিউচার ৬২.৪৬ বা ১.৪৮% বেড়ে ৪.২৭৫.৭৫ প্রতি আউন্স হয়েছে, আর রুপো বেড়েছে ১.৫%-এ ৫০.৮৫ প্রতি আউন্স।
আরও পড়ুন: দীপাবলির বোনাসকে কোথায় বিনিয়োগ করলে পাবেন নিশ্চিত লাভ, দেখে নিন খতিয়ান
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধবিরতি এবং দীর্ঘস্থায়ী মার্কিন সরকার বন্ধ থাকার কারণে সোনার নিরাপদ আশ্রয়-চাহিদা বজায় আছে। এর সঙ্গে আগামী সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভের সুদ কমানোর প্রত্যাশা বাজারে ইতিবাচক মনোভাব জোগাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মত
শুক্রবারের তীব্র পতনের পর নিম্ন দামে ক্রেতাদের আগ্রহ স্পষ্ট। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ মান ও বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা কমেছে, তবুও পশ্চিম এশিয়ার অনিশ্চয়তা ও সরকার বন্ধ থাকা সোনার চাহিদা ধরে রাখছে। ভারতের ক্ষেত্রে দীপাবলি ও বিয়ের মরশুমের শক্তিশালী চাহিদা দামকে সমর্থন দেবে।
ভারতের উৎসবকালীন চাহিদা সোনাকে শক্তি দিচ্ছে, যদিও উৎসবের পর কিছু মুনাফা বুকিং দেখা যেতে পারে। এই সপ্তাহে বাজারের নজর থাকবে মার্কিন CPI ও কোর CPI ডেটার দিকে, যা ফেডের পরবর্তী সিদ্ধান্তে দিকনির্দেশনা দেবে। দাম ১.২৫–১.৩০ লক্ষ টাকার মধ্যে ঘুরবে বলে অনুমান।”
এই বছর সোনার দাম ৫০% এর বেশি বেড়েছে — দুর্বল ডলার, সুদ কমানোর প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির ব্যাপক ক্রয় ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এর পেছনের মূল কারণ।” সোমবার নতুন রেকর্ড প্রতি আউন্স ছোঁয়ার পর কিছু মুনাফা বুকিংয়ে দাম নেমে আসে।

অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ঐতিহ্যগতভাবে সোনার পিক সিজন। দীপাবলি, ধনতেরাস ও বিয়ের অর্ডারে চাহিদা তুঙ্গে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ক্রয়, যা সোনার স্থিতি আরও মজবুত করেছে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ
উৎসব বা বিয়ের জন্য সোনা কিনলে এখনই কেনা যুক্তিযুক্ত, কারণ নভেম্বর পর্যন্ত দাম শক্তিশালী থাকতে পারে। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এককালীন বড় বিনিয়োগ না করে ধাপে ধাপে ক্রয় করা ভালো। এতে গড় ক্রয়মূল্য স্থিতিশীল থাকে ও বাজারের ঝুঁকি কমে।
নিকট ভবিষ্যতে দাম কিছুটা উঁচু থাকলেও অতিরিক্ত লাফালাফি নতুন মুনাফা বুকিং ডেকে আনতে পারে। ১.২৭–১.৩১ লক্ষ টাকার সীমা এখন স্বল্পমেয়াদি গুরুত্বপূর্ণ রেঞ্জ। রুপো সাময়িকভাবে দামে ওঠানামা দেখলেও শিল্প পুনরুদ্ধার ও সবুজ জ্বালানি খাতের চাহিদা পরবর্তী দুই ত্রৈমাসিকে দামকে সমর্থন দেবে বলে বিশ্লেষকরা আশা করছেন।
