মিল্টন সেন, হুগলি: কথা রাখলেন রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কথা অনুযায়ী শুরু করলেন আবাস যোজনার কাজ। বেশ অনেক দিন হলো রাজ্যকে আবাস যোজনার টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্র। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্য মন্ত্রী ঘোষণা করে ছিলেন গরীব মানুষের আবাসের টাকা রাজ্য দেবে। নির্বাচন মেটার পর থেকেই শুরু হয়েছিল সেই কাজ। এবার সোমবার থেকে শুরু হল আবাসের সমিক্ষা। মোট ২০৭ টি গ্রাম।পঞ্চায়েত রয়েছে হুগলি জেলায়। এক সঙ্গে সবকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই শুরু হয়েছে সমিক্ষার কাজ। পঞ্চায়েত কর্মিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমিক্ষা করছেন। খতিয়ে দেখছেন কারা আবাস যোজনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য। এখানেই শেষ নয় উপভক্তাদের বর্তমান বাসস্থানের ছবিও তুলছেন। একইসঙ্গে সেই ছবি সেই জায়গায় দাড়িয়েই মোবাইল ফোনের অ্যাপের মাধ্যমে রাজ্যের পোর্টালে আপলোড করছেন।

 মূলত ২০২০-২১ সালে যাঁদের আবাস যোজনার তালিকায় নাম ছিল। যাঁরা পরে আবেদন করেছিলেন। একইসঙ্গে যাদের ঘর প্রকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ভেঙে গেছে। এদিন সেই সমস্ত বাড়িগুলি ঘুরে দেখছেন পঞ্চায়েত কর্মীরা। জানা গেছে, উপভোক্তাদের নিজের নামে জায়গা। মাসে পনেরো হাজার টাকার থেকে কম আয়। উপভিক্তার নামে তিন চাকা চারা চাকা গাড়ি নেই এমন ব্যক্তি আবাস পাবার যোগ্য হবেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে আবাস যোজনার ঘর নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল রাজ্যের বিরোধী ডল বিজেপি। অভিযোগ তুলেছিল ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া, উপযুক্ত নয় এমন ব্যাক্তিকে ঘর দেওয়া ইত্যাদি। তাই এবারে শুরু থেকেই সতর্ক প্রশাসন।

এবারে আগেই উপভোক্তাকে দিয়ে ডিক্লেয়ারেশন লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভয়ে বা ভক্তিতে কাউকে টাকা দেবে না তাও লেখানো হচ্ছে। কোদালিয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের আয়মা ডাঙার টোটোন রায়ের বাড়ি ছিটে বেরার। বৃষ্টি হলে টালি দিয়ে জল পরে। খুব কষ্টে থাকতে হয়। ঝড় বৃষ্টি হলেই গোটা পরিবার ভয়ে থাকে। ঝড় জলে ছেলেমেয়ে নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে হয় টোটোন রায় কে। তিনি অনেক আগেই আবেদন করেছিলেন আবাসের জন্য। আগে একবার তাঁর বাড়িতে বিডিও অফিসের আধিকারিকেরা এসেছিল। কিন্তু ঘর পাননি। এবারে আর সেই সমস্যা নেই, সব কিছু খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে আবাসের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই টাকা পেলে একটা পাকা ঘর বানাবেন বলে জানান,টোটোনের স্ত্রী মধুবালা রায়।

একইরকম ভাবে সপ্তগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মিঠাপুকুর এলাকাতেও বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা চালায় পঞ্চায়েত কর্মীরা। এই প্রসঙ্গে হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধারা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কাছে বারবার গরীব মানুষের আবাস যোজনার বকেয়া টাকা চেয়েছেন। কেন্দ্র রাজ্যের সেই প্রাপ্য টাকা দেয়নি। কেন্দ্র সরকার টাকা বন্ধ করে দেওয়ার পর রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী নিজের উদ্যোগে রাজ্যের কোষাগার থেকে সেই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বলেছেন রাজ্যের টাকায় যাদের কাঁচা বাড়ি তাদের পাকা বাড়ি করে দেওয়া হবে। এদিন থেকে সেই সমীক্ষা শুরু হয়েছে। আবেদনকারীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সমীক্ষা চলবে।অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমেই উপভোক্তাদের সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলে যাবে। সেখান থেকেই যোগ্য উপভোক্তাদের তালিকা দেওয়া হলে টাকা দেওয়া শুরু হবে। তিন ধাপে সেই টাকা দেওয়া হবে, সেটা দেওয়া হবে সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে।
ছবি পার্থ রাহা।