আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরবঙ্গের বন্যা বিধ্বস্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কলকাতায় রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুধবার দুপুরে উত্তরকন্যা থেকে সড়ক পথ ধরে তিনি সোজা চলে আসেন বাগডোগরা বিমানবন্দরে। এরপর বাগডোগরা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'গতকাল রাতে ৪০০ প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছি সেই সামগ্রীর মধ্যে সব কিছুই রয়েছে। মিরিকে ভোররাত পর্যন্ত সমস্তটা পাঠানো হয়েছে। জেলাশাসকরা সমস্ত জায়গায় প্রাণ সামগ্রী পাঠাচ্ছেন। তার মধ্যে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা এবং আলিপুরদুয়ার রয়েছে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী ঘটনাস্থলে রয়েছেন। আমি আবার কয়েকদিন পর আসব। গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখব।' এরপর বাগডোগরা বিমানবন্দ থেকে বিমানে করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। উল্লেখ্য উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির খতিয়ে দেখতে সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গী ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থা, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার প্রমুখ‌। উত্তরবঙ্গের বন্যা বিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি বন্যা দুর্গত সাধারন মানুষের জন্য ত্রাণ এবং অন্যান্য জিনিসের ব্যবস্থা করেন। এই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনকে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন তিনি।

 

মঙ্গলবার মিরিকের দুধিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ফিরে উত্তরকন্যায় একটি সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছেন, "কেন কার্নিভাল হল সেই নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেদিন আমরা এলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হত। ঘটনা ঘটার ৩৬ ঘন্টার মধ্যে চলে এসেছি।" কলকাতায় রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল এবং উত্তরবঙ্গে বন্যা। যা নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। কেন কার্নিভাল ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গে যাননি তা নিয়ে একের পর এক সমালোচনার তীর বিরোধীরা ছুঁড়েছেন।

 

কলকাতায় থাকলেও গোটা বিষয়টি নিয়ে যে তিনি সজাগ ছিলেন সে বিষয়ে মমতা বলেন, '৪ অক্টোবর ভোর ৫টায় আমার সঙ্গে মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডাইরেক্টর জেনারেল-এর সঙ্গে কথা হয়েছে। সেদিন আমরা এলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হত। আমি এলে আমায় নিয়েই প্রশাসন ব্যস্ত হত। দুর্গাপুজো বাংলার গর্ব। কার্নিভাল আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। সেদিন দেশবিদেশের অনেক অতিথি ছিলেন।' ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতেও যে রাজ্য প্রশাসনের তরফে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই বিষয়টি উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, '২৪ ঘন্টা উদ্ধারকাজ চলেছে। বিপর্যয় ঘটলে ৪৮ ঘন্টা সময় দিতে হয়।' গোটা উত্তরবঙ্গের এক বিস্তির্ণ এলাকা এই মুহূর্তে বলতে গেলে ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। জায়গায় জায়গায় সেতু থেকে রাস্তা, বন্যা থেকে তৈরি হওয়া ধসের জন্য সবই হতচ্ছিন্ন চেহারা নিয়েছে। সেগুলি যে সবই সারিয়ে তোলা হবে সেটা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই রোহিনীর ধস সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। নাগরাকাটায় ব্রিজের কাজ পিডব্লুডি শুরু করে দিয়েছে। সব রাস্তা বা সব ব্রিজ তো একসঙ্গে করা সম্ভব নয়।' বিপর্যয় ঘটলে বিজেপি শাসিত রাজ্যের কাজের সঙ্গে এই রাজ্যের কাজের তুলনা টেনে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেখে নিন মুম্বাই বা অন্যান্য রাজ্য এই বিপর্যয়ে কী কাজ করে আর পশ্চিমবঙ্গ কী কাজ করে! মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, 'মহাকুম্ভে বিপর্যয় ছিল না? ঘোষণা করেছিল?' কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এদিন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় বাজেটে অন্য রাজ্যের জন্য বরাদ্দ হলেও বাংলাকে টাকা দেওয়া হয়নি। 

 

একদিকে তুমুল বৃষ্টি অন্যদিকে পাশের রাজ্য সিকিম এবং প্রতিবেশী দেশ ভুটানের জল, সব মিলিয়েই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'উত্তরবঙ্গে ১২ ঘন্টায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভুটান তাদের সমস্ত বাঁধের জল ছেড়ে দিয়েছে।' বিপর্যয় নিয়ে যে রাজ্য আগে থেকেই উত্তরবঙ্গবাসীকে সতর্ক করেছিল সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৪ অক্টোবর সতর্ক করেছিল প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়ে ইতিমধ্যেই যে রাজ্য সরকারের তরফে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়টি উল্লেখ করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বন্যায় যাদের চাষের জমি ডুবে গিয়েছে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং যাদের গবাদিপশু মারা গিয়েছে তাদেরও সহযোগিতা করবে রাজ্য প্রাণীসম্পদ দপ্তর। এদিন আহত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে দেখতে হাসপাতালে গেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে সাংসদের সঙ্গে দেখা করে তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, "আমি হিংসার সমর্থন করিনা। কিন্তু দাঙ্গা বা বন্যা হলে মানুষের ক্ষোভ একটু বেড়ে যায়।"