আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'আমি কোনও ভাষার বিরুদ্ধে নয়। আমরা দেশকে একত্রিত চাই। আমি কি কখনও কোনো হিন্দিভাষীকে বলেছি যে বাংলা ছেড়ে চলে যাও?' রাজ্যে 'ভাষা আন্দোলন'-এর মিছিলের সূত্রপাত করে বীরভূমের বোলপুরের জামবুনি মোড়ের প্রকাশ্য সভা থেকে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ভবিষ্যত আন্দোলনের কথায় তিনি বলেন, 'বিশ্বকবির স্বপ্নের ছাউনি, মুক্তাঙ্গন, মুক্ত ভালোবাসা, মুক্ত কন্ঠে বিভেদ নয়। এই শান্তিনিকেতনের মাটি থেকে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করলাম'।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি অনেক হিন্দিভাষী ভাইয়ের দেখছি। ঘরের বৌ, মায়েদের দেখছি। তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাই।' এদিনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সুপ্রিয় ঠাকুরের পুত্র সুদীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, শান্তিনিকেতন কবিগুরুর মাটি। সেখানে কোনোভাবেই বিভাজন মানতে পারব না। বিশ্বভারতীর আরেক আশ্রমিক মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আজ এক বিরাট ইতিহাসের সূচনা হল কবিগুরুর মাটিতে। একদিন এমনই বাংলা ভাষা, বাঙালিদের অত্যাচারের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মিছিল করেছিলেন। রাখিবন্ধন করেছিলেন। আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেই আন্দোলনের সূচনা করলাম।' ছিলেন গীতিকন্ঠ মজুমদার, লক্ষণ দাস বাউল প্রমুখ।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই মঞ্চ থেকে কবিগুরুকে প্রণাম করে বলি, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির। আমি গর্ব করে বলি আমি বাংলায় জন্মেছি। দরকার হলে জীবন দেব। আমার ভাষা কেড়ে নিতে দেব না। কারও ভাষা কেড়ে নিতে দেব না। লড়াই হচ্ছে এবং লড়াই হবে। আমরা সব ভাষাকে ভালবাসি। কিন্তু আমার ভাষাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আমার ভাষাকে শেষ করতে গেলে লড়ছি এবং লড়ব। সবাইকে মাঠে নামতে হবে।'
ভিন রাজ্যে 'অত্যাচারিত' বাংলাভাষীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যারা বাংলার বাইরে অত্যাচারিত হচ্ছেন তাঁদের অনুরোধ করব ফিরে আসুন। বলুন কবে আসবেন? আমরা নিয়ে আসব। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করব। যখন ওরা চায় না তখন চলে আসুন।' নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করে এদিন মমতা বলেন, 'নির্বাচন কমিশন বলছে আগের ভোটার কার্ড হবে না। নতুন ভোটার লিস্ট হবে। ওদের জিজ্ঞাসা করুন তোমাদের বার্থ সার্টিফিকেট আছে তো?' হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, একটা মানুষের ঠিকানা কেড়ে নিলে তোমার ঠিকানা রাখব না।

উল্লেখ্য, সোমবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে এক প্রশাসনিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে তিনি ভিন রাজ্যে একের পর এক বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বন্ধ করতে তাঁদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। বলেন, 'আমাদের ২২ লক্ষ শ্রমিক যারা বাইরে কাজ করেন তাঁদের সবাইকে ফিরিয়ে আনুন এবার'। বর্তমানে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকার যে 'সেল' তৈরি করেছে তার দায়িত্বে আছেন বীরভূমের বাসিন্দা ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। এদিনের সভা থেকে তাঁকে নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সামিরুল ওঁদেরকে ফেরানোর ব্যবস্থা করো।'
এই শ্রমিকদের জন্য রাজ্যের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাখ্যায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রয়োজনে এঁদের থাকার ব্যবস্থা যেমন করে দেওয়া হবে পাশাপাশি এঁদের কাজের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গত বেশ কিছুদিন ধরে ভিন রাজ্য বা মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর একের পর এক অত্যাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকলেও তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক বা মারধরের অভিযোগও উঠে এসেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে যাওয়া এই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে তৈরি করা হয়েছে হেল্পলাইন। মুখ্যমন্ত্রী বারবার সরব হয়েছেন এই অত্যাচারের অভিযোগে। এদিন বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে তিনি এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে এগোলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
