মিল্টন সেন, হুগলি: স্ত্রীকে কাটারি দিয়ে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা। ঘাড়ের পেছনে কোপ। ধারালো কাটারির কোপে বাদ পড়েছিল দুই হাতের চার আঙুল। মুখের উপরে অংশে কাটারির কোপে উপরের পাটির দাঁত হারিয়েছিলেন স্ত্রী। ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন স্বামীর সেই আক্রমণে। তবে হামলার থেকেও বেশি পীড়া দিয়েছিল স্বামীর এই আচরণ। শনিবার চুঁচুড়া জেলা আদালতে অভিযুক্ত স্বামী প্রদীপ মেটের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। 

 

ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালের ৩ জুন, হুগলির পোলবা থানার সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধূমা গ্রামে। নির্যাতিতা স্ত্রী ওই গ্রামেরই বাসিন্দা পূর্নিমা মেটে সুগন্ধার একটি বি ফারমা কলেজের হোস্টেলে ওয়ার্ডেনের কাজ করেন। ঘটনার দিন বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার পথে কামদেবপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে তাঁর পথ আটকায় তাঁর স্বামী প্রদীপ মেটে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা কাটারি দিয়ে কোপাতে শুরু করে তাঁকে। মহিলা দুই হাত দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ধারালো কাটারির কোপে দুই হাতের চারটে আঙুল কেটে মাটিতে পরে যায়। মুখে কাটারির কোপ লাগে উপরের পাটির সব দাঁত কেটে পরে যায়। ঘাড়ে, হাতে এলোপাথারি কোপে ক্ষতবিক্ষত হন বধু। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। 

 

প্রসঙ্গে সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গাঙ্গুলি বলেছেন, অভিযুক্ত প্রদীপ মেটের বিরুদ্ধে তদন্তকারী অফিসার সুবীর গোস্বামী ২২ নভেম্বর ২০২২ সালে চার্জশিট জমা দেন। ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৪১, ৩০৭, ৩২৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। টানা ১৫ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হয়। শুক্রবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন চুঁচুড়া জেলা আদালতের তৃতীয় দায়রা বিচারক অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। এদিন তার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা শোনান। 

 

পুলিশি তদন্তে খুশি আক্রান্ত মহিলা। পূর্নিমার মা পারুল পাল বলেন, পুরুষদের কাজই হল সন্দেহ করা। মেয়ে বাইরে কাজে যায় সেটা পছন্দ ছিল না। সব সময় বাড়িতে অশান্তি করত। অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মেয়েকে মেরেই ফেলেছিল। কোনও ভাবে বেঁচেছে। একমাত্র মেয়েকে তিনি একাই বড় করছেন। সরকারি আইনজীবী জানান, মহিলার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে চুঁচুড়া হাসপাতালে তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রায় সাতাশ দিন জমে মানুষে টানাটানি চলেছে, কোনও রকমে লড়াই করে বেঁচে ফিরেছেন। খুব দ্রুত এই মামলার তদন্ত শেষ হয় এবং সাজা ঘোষনা হল। এদিন চুঁচুড়া আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে পূর্ণিমা দেবী বলেছেন, অভিযুক্ত স্বামীর যাবজ্জীবন সাজা শুনে তিনি কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছেন।

ছবি পার্থ রাহা।