আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। মাত্র দু’মাসের মধ্যেই ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের সম্ভাবনা। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ভবানী ভবনে বসেছিল বামফ্রন্টের কৌশল নির্ধারণী বৈঠক। আর সেই বৈঠকেই উঠে এল নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত।

সূত্রের খবর, সভায় কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির প্রস্তাবে আপত্তি জানায় ফ্রন্টের কয়েকটি শরিক দল। তাদের বদলে সিপিআই ও ফরওয়ার্ড ব্লক সক্রিয়ভাবে দাবি তোলে— আসন্ন নির্বাচনে ‘বৃহত্তর বাম ঐক্য’ গড়ার। আলোচনায় উঠে আসে সিপিআই (এমএল)-লিবারেশন ও এসইউসিআইয়ের নামও। সিপিআই'র রাজ্য কমিটির এক সদস্য আজকাল ডট ইন-কে জানান, বিহার ভোট কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে স্পষ্টতই বিরক্ত তারা। "যেখানে যেখানে আমাদের গড় সেখানে ডিস্টার্ব করেছে কংগ্রেস," জানান এক রাজ্য কমিটির সদস্য। অতএব এবার কংগ্রেসকেই স্থির করতে হবে এই রাজ্যে তারা কী চায়. আইএসএফ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ন্যায্য আসন বন্টনে রাজি হলে জোটে কোনও অসুবিধা নেই, তবে যৌক্তিকতার বাইরে গিয়ে যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার ইত্যাদি আসন দাবি করলে দরজা বন্ধ।

এর আগে ১৯ নভেম্বর নৈহাটিতে সভা থেকে সিপিআই (এমএল)-এর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল ‘বামপন্থার পুনর্জাগরণের’ ডাক। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই, এসইউসি, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক–সহ বিভিন্ন দল। সেই আবহেই ফের উঠল ঐক্যের দাবি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আরএসপির তপন হোড় এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়। সিদ্ধান্ত হয়েছে— এসইউসিআই এবং লিবারেশনের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রাথমিক আলোচনার দায়িত্বে থাকবেন বিমান বসু।

ওদিকে কংগ্রেসের সুর কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে— ২৯৪টি আসনেই লড়াই করবে দল। প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের মন্তব্য, দলের কর্মীরা রাজ্য জুড়ে  লড়াই চায়, তাই তাদের মতকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সদ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক গুলাম মীরও প্রদেশ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ এবং ২০২১— দু’বারই বাম ও কংগ্রেস একসঙ্গে লড়েছে। কিন্তু এবার সেই জোটের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ। ফ্রন্টের অধিকাংশ শরিক কংগ্রেসবিহীন লড়াইয়ের পক্ষে, আর কংগ্রেসও চাইছে স্বতন্ত্র পথ। ফলে আলিমুদ্দিনের ‘জোট আশা’ এখনও অনিশ্চয়তায় ঝুলে।

এসইউসিআই এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনার খবর অস্বীকার করেছে। দলের রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন— “এই বিষয়ে আমরা এখনো কোনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব বা বৈঠকের বার্তা পাইনি।” এখন দেখার— ভোটের আগে বাম রাজনীতিতে নতুন জোট গড়ার রাস্তা খোলে, নাকি দলগুলো নিজস্ব পথে গিয়ে ত্রিমুখী প্রতিযোগিতাই বাস্তব হয় রাজ্য রাজনীতিতে।