আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাজায় ইজরায়েলের ভয়াবহ সামরিক অভিযানে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে। বুধবার, ২০ আগস্টে অন্তত ৮১ জন প্যালেস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অনাহারে মৃত্যু হয়েছে আরও তিনজনের। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজায় খাদ্য অবরোধের কারণে অনাহারে মোট ২৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ১১২ জন শিশু। ইজরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, তারা গাজা সিটির দখল নিতে নতুন সামরিক অভিযানের প্রাথমিক ধাপ শুরু করেছে। ওই শহরে বর্তমানে প্রায় দশ লাখ মানুষ আটকে আছেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বন্ধ থাকায় প্রতিদিন আরও গভীর হচ্ছে সংকট।
বুধবারের হামলায় দক্ষিণ গাজার এক তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া তিনজন নিহত হন। এ ছাড়া গাজা হেল্প ফাউন্ডেশনের খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে সাবেক জাতীয় বাস্কেটবল খেলোয়াড় মহাম্মদ শালানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিনে খাদ্য সংগ্রহে আসা অন্তত ৩০ জন প্রাণ হারান। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সতর্ক করে জানিয়েছে, এটি কেবল ক্ষুধা নয়, সরাসরি অনাহার। সংস্থার মতে, অপুষ্টি শিশুদের বিকাশে স্থায়ী ক্ষতি করছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করছে এবং সাধারণ অসুস্থতাকেও প্রাণঘাতী করে তুলছে। জাতিসংঘের অপর সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA) জানিয়েছে, গাজা সিটির প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে অন্তত একজন মারাত্মকভাবে অপুষ্ট।
আরও পড়ুন: চাঁদের বুকে যৌনতার ইচ্ছা! নাসার ইন্টার্নের কীর্তিতে কেঁপে উঠল আমেরিকা
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইজরায়েলের অবরোধ গাজার সাধারণ মানুষকে ‘ক্ষুধা আর বোমার মধ্যে’ বেছে নিতে বাধ্য করছে। আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র উদ্বেগ সত্ত্বেও, ইজরায়েল তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে এই পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে গাজার সাধারণ মানুষের জীবনই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মূল্য। তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো, খাদ্য সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা অভিভাবকরা, কিংবা অনাহারে মৃত্যুমুখে পতিত শিশুরা—সবাই এখন এই যুদ্ধ ও অবরোধের সবচেয়ে নির্মম শিকার।
ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন সংঘাত একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী সংকটগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্যালেস্তিনিদের জমি দখল, বাস্তুচ্যুতি এবং অধিকারহীনতার শিকার হতে হয়েছে। কয়েক দশকের যুদ্ধ, দখলদারি, গাজা অবরোধ ও পশ্চিম তীরের বসতি সম্প্রসারণ এই সমস্যাকে আরও তীব্র করেছে। বর্তমানে গাজায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে—খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, গাজায় প্রতি তিনজন শিশুর একজন গুরুতরভাবে অপুষ্ট।
অন্যদিকে ইজরায়েল দাবি করে, তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামরিক অভিযান চালাতে বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে এর সবচেয়ে বড় খেসারত দিচ্ছে নিরপরাধ সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে তীব্র বিভাজন দেখা দিয়েছে। কেউ ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, আবার কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে।
এই সংকটের স্থায়ী সমাধান কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে সম্ভব নয়। একটি ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক সমাধান, যেখানে প্যালেস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকার স্বীকৃত হবে এবং ইজরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, সেটিই শান্তির একমাত্র পথ। অন্যথায়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রক্তপাত ও ক্ষোভ চলতেই থাকবে। শেষে বলা যায়, এই সংঘাতের প্রকৃত সমাধান কেবল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সমঝোতার মধ্য দিয়েই সম্ভব।
