আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরাখণ্ডের পর জম্মু কাশ্মীর। মেঘভাঙা বৃষ্টির পর মর্মান্তিক পরিণতি। একেবারে উত্তরকাশীর মতোই, মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান।  ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল ঘর বাড়ি, ভেসে গেল। বৃহস্পতিবার থেকেই লাফিয়ে বাড়ছিল মৃতের সংখ্যা।

শুক্রবার জানা গেল, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, দুই সিআইএসএফ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এখনও বহু মানুষের আটকে থাকার আশঙ্কা। প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ১৬৭জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ৩৮ জনের অবস্থা গুরুতর।  জম্মু-কাশ্মীরের মুখমন্ত্রী একাধিক কর্মসূচি বাতিল করেছেন। ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

 

বৃহস্পতিবার দুপুরে চিসোতি জেলার মচৈল মাতা মন্দিরের যাত্রাপথে হড়পা বান নেমে আসে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জানা যায়, ভয়াবহ হড়পা বানে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৩২ জনের। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা। কিশ্তওয়াড়ের ডেপুটি কমিশনার পঙ্কজ শর্মা বৃহস্পতিবারেই জানান, চাসোতি গ্রামে হড়পা বান নেমে এসেছে। এই গ্রাম থেকে ‘মচৈল মাতা যাত্রা’ শুরু হয়। ঘটনার পর পরই উদ্ধারকারী দল ওই গ্রামে পৌঁছেছে। উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। 

আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাফল্যের মুকুটে আরও এক পালক, গড়লেন বড় রেকর্ড...

 

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন,“চাসোতি এলাকায় বিশাল মেঘ ফেটে পড়ার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে যথেষ্ট হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে তৎপর হয়েছে, উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় উদ্ধার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমার অফিস নিয়মিত আপডেট পাচ্ছে, সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদান করা হবে।”

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবারেই জানিয়েছিলেন, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে কথা বলেছেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেছেন। এক্স-এ ওমর লিখেছেন, “আমি জম্মুর কিশ্তওয়াড় অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। খবরটি ভয়াবহ এবং নির্ভুল, মেঘভাঙা বৃষ্টির কবলে পড়া এলাকা থেকে খবর পেতে দেরি হচ্ছে। উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের ভিতর এবং বাইরে থেকে সম্ভাব্য সকল সম্পদ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমি কোনও চ্যানেল বা সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলব না।”

 

অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল। প্রবল বৃষ্টিপাত ও মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে সিমলা এবং লাহৌল ও স্পিতি জেলার একাধিক রাস্তা বন্ধ ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশপাশি বেশ কয়েকটি সেতু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরো রাজ্য জুড়ে অন্তত ৩২৫টি রাস্তা, যার মধ্যে দু’টি জাতীয় সড়ক রয়েছে, তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মান্ডি জেলায় ১৭৯টি এবং কুল্লু জেলায় ৭১টি রাস্তা অচল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, লাহৌল ও স্পিতি জেলার মায়াদ উপত্যকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে হঠাৎ করে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কারপাত, চাংগুট এবং উদগোস নালার মতো এলাকায় দু’টি সেতু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ঘটনার জেরে কারপাত গ্রামে পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠেছে। হিমাচল প্রদেশের এই বিপর্যয়ে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি।

বুধবার রাত থেকে কান্দাঘাটে ১০০ মিমি, জাটন ব্যারেজে ৮৭ মিমি, উনা ৮৫.৪ মিমি, সোলান ৮১.৪ মিমি, ওলিন্দা ৭৬ মিমি, শিলারু ৭৩ মিমি, সিমলা ৬৯ মিমি, কুফরি ৬৬ মিমি, জুব্বারহাট্টি ৬৫.২ মিমি, কাসৌলিতে ৬২ মিমি, কোঠীতে ৬১.২ মিমি, মুরাই দেবী ৫১.৮ মিমি এবং ধরমপুর ৫০.২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস 'হলুদ' সতর্কতা জারি করেছে, ২০ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যের বিচ্ছিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় সিমলা, কুল্লু, কিন্নৌর এবং লাহুল ও স্পিতি জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বান দেখা দিয়েছে।