আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেখা যাচ্ছে, পড়ুয়াদের বেশিরভাগই গরমের ছুটিতে বাড়ি থেকে যে লেখা লিখে আনছে তা পুরো নিখুঁত। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ লেখা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে লেখা। নিউইয়র্কের কুইন্সে অবস্থিত বিখ্যাত টাউনসেন্ড হ্যারিস হাইস্কুল পড়ুয়াদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার ঠেকাতে অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন পাঠ্যসূচির লেখাগুলো টাইপ করে জমা দেওয়া আর চলবে না। বরং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ক্লাসে বসেই হাতে লিখে রচনা জমা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এমনটাই।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুল ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে সহজেই উত্তর লিখে ফেলতে পারে, যা প্রকৃত দক্ষতা যাচাইয়ে বাধা সৃষ্টি করছে। ইংরেজি শিক্ষক ব্রায়ান সুইনি স্কুলের ছাত্রপত্র দ্য ক্লাসিককে বলেন, ‘আমরা অতীতে এআই-এর অতিরিক্ত ব্যবহার লক্ষ্য করেছি। তাই ক্লাসে বসে লেখা হলে শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনার একটি আসল প্রতিফলন পাওয়া যাবে’। এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে ক্যাম্পাসে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী বলছে, কয়েকজনের ভুল ব্যবহারের জন্য সবাইকে শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়।

আরও পড়ুন: হাইকোর্টের দরজায় কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা মহিলার, জল্পনা একাধিক কারণ নিয়ে

এক ছাত্রের অভিযোগ, ‘অন্যরা এআই অপব্যবহার করায় আমাদেরও তার জন্য জবাবদিহি করতে হচ্ছে—এটা অন্যায়’। আবার অনেকের আশঙ্কা, দ্রুত লিখতে না পারা শিক্ষার্থীরা এতে অসুবিধায় পড়বে। তবে স্কুলের এই নীতিকে সমর্থনও করেছেন অনেকে। দ্য ক্লাসিকের সহসম্পাদক এবং জুনিয়র ইয়াসমিন ইসমাইল একে ‘যুক্তিসঙ্গত প্রথম পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছেন। সিনিয়র সহসম্পাদক রায়ান চেনের মতে, ‘এতে শিক্ষার্থীরা পুরো বই পড়তে উৎসাহিত হবে, শুধু এআই দিয়ে কয়েক মিনিটে সারসংক্ষেপ বা বিশ্লেষণ পাওয়ার বদলে’।

শিক্ষাক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান এআই ব্যবহারের যুগে শিক্ষার্থীদের নিজেদের দক্ষতাকে তুলে ধরার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপকে দেখা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে, কারণ এই নীতি স্কুলভেদে, এমনকি শিক্ষকভেদেও ভিন্ন। নিউইয়র্ক সিটির হান্টার কলেজ হাইস্কুলের ছাত্রী শেহেরাজাদ শোনফেল্ড বলেন, ‘এআই ব্যবহার না করলে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে, পড়ুয়ারা আরও বেশি করে এআই ব্যবহার করে থাকেফল করার জন্য’।

নিউইয়র্ক সিটির শিক্ষা বিভাগ চ্যাটজিপিটিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও এখনও সুনির্দিষ্ট নীতি তৈরির কাজ করছে। একইসঙ্গে শিক্ষকরা কীভাবে দায়িত্বশীলভাবে ক্লাসরুমে এআই ব্যবহার করবেন, তা নিয়েও প্রশিক্ষণ চলছে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির পুন্য মিশ্রর মতে, স্কুলগুলির উচিত শিক্ষার্থীদের এআই বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার শেখানো, নিষিদ্ধ করা নয়। অন্যদিকে, টিউটরিং বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেস কুয়েলার মনে করেন, টাউনসেন্ডের এই পদক্ষেপ একেবারেই প্রয়োজনীয়।