আজকাল ওয়েবডেস্ক: এশিয়া কাপকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। আসন্ন এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনার ঝড়। কিন্তু সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত এই ম্যাচ কোনও ভাবেই বাতিল হচ্ছে না। সূত্রের মতে, ‘ভারত-পাকিস্তানের এই ম্যাচ কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজের অংশ নয়, বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ম্যাচ। ভারত খেলতে না এলে পাকিস্তানকে ওয়াকওভার দেওয়া হবে। যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়’। উল্লেখ্য, পহেলগাঁওয়ের ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানির পর পাকিস্তানকে পুরোপুরি বয়কট করেছে ভারত। সাময়িক সামরিক উত্তেজনার পর, এবার ফের মাঠে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিকেট দল। ক্রীড়ামন্ত্রক জানিয়েছে, ‘বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ কোনও খেলার প্রশ্নই নেই’।
তবে অলিম্পিক চার্টার অনুযায়ী, বহুজাতিক প্রতিযোগিতায় রাজনৈতিক কারণে কোনও দেশকে বাদ দেওয়া যায় না। এই কারণেই পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ থেকে বিরত করা হবে না বলে জানিয়েছে সরকার। জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই অবস্থান ভারতের ২০৩৬ অলিম্পিক আয়োজন করার স্বপ্নপূরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাক্তন ডিজি, ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেজেএস ঢিলন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনও ক্রিকেটের সম্পর্ক বন্ধ রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। অন্যদিকে, প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করছি, কিন্তু খেলা চালু রাখা উচিত’।
আবার, ন্যাশনাল স্পোর্টস গভর্নেন্স বিল অনুযায়ী, ‘জাতীয় স্বার্থে’ এবং ‘ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে’ ক্রীড়া মন্ত্রক ভারতীয় দলের আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। তবে এটা এখনও আইন হিসেবে পাশ হয়নি। সংসদের দুই কক্ষ এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন। যতক্ষণ না এই বিল আইন হয়ে উঠছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিসিসিআই কেন্দ্রীয় সরকারের আওতার বাইরে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা থেকে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের হাতেই। এই হাইভোল্টেজ ম্যাচ ঘিরে টিভি সম্প্রচার ও বিজ্ঞাপন আয়ের উপর নির্ভর করছে কয়েক কোটি টাকা। সোনি নেটওয়ার্কের এশিয়া কাপের আট বছরের সম্প্রচার স্বত্ব রয়েছে। ইতিমধ্যে, সম্প্রচারকারী সংস্থা এসিসিকে ১৭০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে।
ম্যাচ বাতিল হলে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে সোনি। এর প্রভাব পড়বে বাকি ২৪টি সদস্য দেশের ওপরও, যারা অধিকাংশই উন্নয়নশীল ক্রিকেট দেশ। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পর ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বর্তমানে বন্ধ। কিন্তু আইসিসি বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ মুখোমুখি হয়েছে বহুবার। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আপাতত হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান সম্পর্কের প্রভাব পড়েছে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লিজেন্ডস লিগেও। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে চাননি ভারতের অনেকেই। তাই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রাথমিক পর্বের ম্যাচটি বাতিল করা হয়।
তা নিয়ে বিতর্ক যখন ঘনীভূত হচ্ছে তখন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান জানিয়ে দিলেন, আগামী দিনেও তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবেন না। এবার ৬টি দল নিয়ে লিজেন্ডস লিগের আয়োজন করা হয়েছে। ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে টুর্নামেন্ট। ভারতীয় দলের অনেক তারকাই এই ম্যাচ খেলতে চাননি। এঁদের মধ্যে রয়েছেন যুবরাজ সিং, শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়না, হরভজন সিং, ইরফান পাঠান-সহ আরও অনেকে। তাঁরা খেলতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষই বাতিল করে দেয় ম্যাচটি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে না চাওয়ার কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন শিখর ধাওয়ান। কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন, দুই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও উত্তেজনার কথা। ধাওয়ানের টুইট, ‘আমার কাছে আমার দেশই সবার আগে। দেশের উপরে কোনও কিছুই হয় না। জয় হিন্দ’।
