শুক্রবার ০২ মে ২০২৫
সম্পূর্ণ খবর
RD | ০১ মে ২০২৫ ২২ : ৪৫Rajit Das
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজা, মহারাজা, বাদশা, সম্রাট এবং নবাব, নাম শুনলেই সমীহ জাগে। কিন্তু যুগ বদলেছে। ফলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আর এই সব পদের তেমন গুরুত্ব নেই। তবুও ইতিহাসে সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে অনেক মানুষের মধ্যেই এখনও বিরাট কৌতূহল রয়ে গিয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন রাজা, সম্রাট, বাদশাহ, ছত্রপতি, নবাবের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এই প্রতিবেদনে সেই সম্পর্কেই আলোকপাত করা হবে।
রাজা কে ছিলেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু বা বৌদ্ধ শাসকরা রাজা শব্দটি উপাধি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সংস্কৃত শব্দ 'রাজন' থেকে উদ্ভূত এই শব্দটি ইংরেজি শব্দ 'কিং'-এর সমার্থক। তবে হিন্দিতে এর অনেক সমার্থক শব্দ রয়েছে, যেমন- নৃপ, ভূপ, ভূপতি, নৃপতি, মহীপাল, নরেন্দ্র, নরেশ, রাও, নরপতি, ভূপাল, মহীপ, মহারাজ। রাজারা তাঁদের সীমানার মধ্যে সার্বভৌম শাসক ছিলেন। রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ ছিল সম্পূর্ণ রাজাদের দখলে। তৎকালীন বংশগত রাজতন্ত্র ব্যবস্থায়, পদবি প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে সংশ্লিষ্ট পরিবারে থেকে যেত।
সম্রাট, ছত্রপতি এবং চক্রবর্তী:
রাজাদেরও রাজা ছিল, যাদের সম্রাট বলা হত। কথিত আছে যে, সম্রাট হওয়ার যোগ্যতা রাজসূয় যজ্ঞের ঐতিহ্য থেকে এসেছে। অভিধানে উল্লেখ, যিনি সফলভাবে রাজসূয় যজ্ঞ সম্পাদন করতেন তাঁকেই সম্রাট বলা হত। সম্রাট ছিলেন রাজাদের রাজা। একাধিক রাজার উপর তাঁর 'আধিপত্য' ছিল। তার মানে, রাজাদের তুলনায় সম্রাটের ক্ষমতা অনেক বেশি এবং তাঁর পদমর্যাদা ছিল আরও উচ্চতর। অর্থাৎ, রাজাদের মধ্যে সর্বাগ্রে বা শ্রেষ্ঠকে বলা হত মহারাজা এবং সম্রাট ছিলেন মহারাজার চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং অধিক ক্ষমতাবান।
ঘটনাক্রমে, মারাঠা সাম্রাজ্যের শাসকরা ছত্রপতির একটি পৃথক উপাধি ব্যবহার করতেন। মারাঠি ভাষায় এর অর্থ হল প্রভুদের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং সার্বভৌম।
অন্যদিকে, সমগ্র পৃথিবীর উপর একক কর্তৃত্বকারী সম্রাটদের বলা হত চক্রবর্তী। এই অর্থে, চক্রবর্তী সম্রাটরা পৃথিবীতে বিরল ছিলেন। কিন্তু সেই সম্রাটদের সভাকবিরা, যাঁরা বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন- তাদের কল্পনায় চক্রবর্তী সম্রাটদের সমগ্র পৃথিবীর শাসক হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং চক্রবর্তী হিসেবে তাদের প্রশংসা করতেন। বিশাল ভারতজুড়ে এরকম অনেক চক্রবর্তী সম্রাট ছিলেন।
রাজা, বাদশাহ এবং সুলতান:
সম্রাটের ফারসি সমার্থক শব্দ হল বাদশাহ। এই উপাধিটি সাধারণত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় স্বঘোষিত শাসক বা স্বাধীন শাসকদের জন্য ব্যবহৃত হত। বাদশাহরা নিজেদের কর্মের জন্য কারোর কাছে জবাবদিহি করতেন না।
ব্যবহারের উপর নির্ভর করে অভিধানে বাদশাহ শব্দের আরও অনেক অর্থ দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ- প্রভু, ঈশ্বর, দাতা, হুজুর, সাহেব, জনাব, জনহিতৈষী, স্বৈরাচারী, ধনী, অন্যদের প্রতি উদাসীন, নিজের ইচ্ছার মালিক, নেতা, উচ্চপদস্থ, জ্যেষ্ঠ, সম্মানিত এবং সরদার ইত্যাদি।
বাদশাহ-র ফারসিতে একটি সমার্থক শব্দ আছে, যা হল পাদশাহ। যা ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের উপাধি হিসেবে ব্যবহৃত হত।
হিন্দু বাদশাহী:
মারাঠাদের দ্বিতীয় পেশোয়া প্রথম বাজিরাও (১৭২০-১৭৪০) ভারত থেকে মুসলমানদের শাসনের অবসান ঘটাতে হিন্দু রাজাদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা ছিল ব্যর্থ প্রচেষ্টা। যার নাম তিনি 'হিন্দু পদ পাদশাহী'ও রেখেছিলেন।
আরবি শব্দ 'সুলতান' রাজার সমার্থক। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাহমুদ গজনী ছিলেন বিশ্বের প্রথম স্বাধীন মুসলিম শাসক যাকে সুলতান বলা হত।
নবাব মানে ডেপুটি:
এবার নবাবদের সম্পর্কে কিছু কথা। আরবি শব্দ 'না'ইব' থেকে উদ্ভূত এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি ভাষায় ব্যবহৃত, শব্দটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেপুটি বা ভাইসরয়। আমাদের দেশে বাংলা, আবোধ এবং হায়দ্রাবাদ ইত্যাদির নবাবরা মুঘল আমলে ডেপুটি ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, দেশের বিভিন্ন প্রদেশের সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থার জন্য সুলতান নিযুক্ত নায়েব, নাজিম, সুবেদার বা গভর্নর পরবর্তীতে অবোধ এবং বাংলায় নবাব বা নবাব উজির হয়ে ওঠেন। কিন্তু, হায়দ্রাবাদের নবাবরা নিজেদেরকে নিজাম-উল-মুলক (সংক্ষেপে নিজাম) বলতে শুরু করেন এবং তাঁদের অধীনস্থদের নবাব বলতেন।
এখানে এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, নবাবরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাঁরা কখনওই রাজাদের মতো সার্বভৌম ছিলেন না। নবাবরা কেবল মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার ভিত্তিতে তাঁদের প্রদেশের প্রশাসন পরিচালনা করতেন।
পরবর্তীতে, যখন অবোধের নবাবদের বিলাসিতা সম্পর্কে গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন লোকেরা তাদের আশেপাশে বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী যাকেই দেখত তাঁকে নবাব বলে ঠাট্টা করত।
রাজা বনাম নবাব:
সাধারণ ধারণায় রাজা এবং নবাব উভয়ই একই বা সমান, কিন্তু সত্য হল যে, তাঁদের মধ্যে কোন সমতা নেই। রাজারা অন্য কারোর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন না। কিন্তু, নবাবরা মুঘল সালতানাতের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন।
রাজার উপাধি পূর্বে বংশগত ছিল। যে রাজা এটি অর্জন করেছিলেন, তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী এটি তার উত্তরাধিকারীর কাছে হস্তান্তর করতে পারতেন। কিন্তু নবাব উপাধি ছিল মুঘল সম্রাটের উপহারের মতো। মুঘল সম্রাটদের প্রতি আনুগত্যের নিরিখে নায়েব উপাধি টিকিয়ে রাখা নির্ভর করত। আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য, প্রয়া সব নবাবকেই প্রতি বছর মুঘল সম্রাটের কাছে একটি উপহার পাঠাতে হত। তাছাড়া, যখনই রাজপরিবারের সদস্যরা প্রদেশ পরিদর্শন করতেন, তাঁদের সর্বোচ্চ যত্ন করতে হত। তাঁর উত্তরাধিকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও মুঘল সম্রাটরাই নিতেন।
হ্যাঁ, কখনও কখনও একজন নবাব খুব শক্তিশালী হয়ে উঠতেন এবং দিল্লিকে হুমকি দিতে শুরু করতেন, যা এমনকি সংঘর্ষের পরিণত হত।
নবাব বনাম শাহ:
গাজিউদ্দিন হায়দার অবোধের নবাব হওয়ার পর, খুব অল্প সময়ের জন্য সার্বভৌমত্ব ভোগ করেছিলেন। তবে তা ছিল ব্যতিক্রম। ১৮১৮ সালে, ব্রিটিশদের প্রভাবে গাজিউদ্দিন হায়দার নিজেকে 'বাদশা-ই-আওধ' ঘোষণা করেন এবং নিজস্ব মুদ্রা প্রচলন করার চেষ্টা করেন।
গাজিউদ্দিনকে বিভ্রান্ত করার পেছনে ব্রিটিশদের উদ্দেশ্য ছিল যে, যদি দিল্লি এবং লক্ষ্ণৌর রাজাদের মধ্যে শান্তি বজায় থাকে, তাহলে ব্রিটিশ শাসন সম্প্রসারণের কাজ সহজ হয়ে যাবে। অবোধের ‘নবাবী’দের এই ব্যবস্থা, যা ‘শাহী’ তে রূপান্তরিত হয়েছিল। ব্রিটিশরা নবাব ওয়াজিদ আলী শাহকে ক্ষমতাচ্যুত ও নির্বাসিত না করা পর্যন্ত যা অব্যাহত ছিল। ইতিমধ্যে, নবাবরা তাদের নামের আগে 'নবাব' এবং শেষে 'শাহ' উপাধি ব্যবহার করতে থাকেন। তা সত্ত্বেও, তাঁরা সাধারণ মানুষের মধ্যে 'রাজকীয়' ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারেনি, তাঁরা 'নবাবি'ই রয়ে গেছিলেন। এটা অন্য বিষয় যে এর কারণে দিল্লি এবং লখনউয়ের মধ্যে বারবার শত্রুতা তৈরি হয়েছিল।
এই বিদ্বেষের অবসান ঘটানোর জন্য, ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, বিরজিস কদরকে 'শাহ' নয়, কেবল 'নবাব' করা হয়েছিল।
উদদৌলা ও উদ্দিন:
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। অবোধে প্রশাসনে ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির আগে, এর নবাব ছিলেন 'উদ্দৌলা' অর্থাৎ রাজ্য বা দেশের রক্ষক। উদাহরণস্বরূপ, সুজা-উদ-দৌলা এবং আসাফ-উদ-দৌলা। এঁরা ধর্মের উপর খুব একটা হস্তক্ষেপ করেননি। কিন্তু ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার পর, তিনি 'উদ্দিন' অর্থাৎ ধর্মের রক্ষক হিসেবেও নিজের পরিচয় তুলে ধরতে শুরু করেন। গাজিউদ্দিনের পর তাঁর পুত্র নাসিরুদ্দিনও 'উদ্দীন' উপাধি নিজের কাছে রেখেছিলেন।
মজার ব্যাপার হল, ইংল্যান্ডে এক সময় সেইসব লোকদেরও নবাব বলা হত, যাঁরা ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে কাজ করতেন।
নানান খবর

নানান খবর

ভারত-পাক উত্তাপে জাফরানের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি, এক কেজির দাম পাঁচ লক্ষ!

কাঁপছে ইসলামাবাদ, ভারতের হাত থেকে রক্ষায় এবার রাজস্থান সীমান্তে ঘুঁটি সাজাচ্ছে পাক বাহিনী

‘সকলকে বেছে বেছে জবাব দেওয়া হবে’, পহেলগাঁও কাণ্ডে মুখ খুললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ, কড়া হুঙ্কার

যদ্ধের আবহে ভারতীয় শিখ সেনাদের তাতাতে মরিয়া প্রয়াস খালিস্তানি পান্নুর, পাকিস্তানকে সহায়তার ঘোষণা

'ও'-র জন্যই ভাঙছে সংসার, যুবতীর অভিযোগে কাঠগড়ায় বিড়াল

দাড়ির জন্য ডিভোর্স! মীরাটে দেওরকে নিয়ে চম্পট দিল বৌদি!

দিল্লির সাতটি মুঘল স্মারকে অবৈধ দখল: তথ্যের অধিকার আইন

‘চুল ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল গুলি’, পহেলগাঁওয়ে বেঁচে গিয়েছেন এক চুলের জন্য, সামনে এল শিউরে ওঠা কাহিনি

স্বচ্ছ ভারত মিশনের দশ বছরে, নিকাশী শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তা ও সম্মান এখনো অধরা

গুগল ম্যাপের বিভ্রাটের কারণে ভাঙতে বসেছিল বিয়ে, ঘটনা শুনলে অবাক হবেন আপনিও

যুদ্ধের আবহ, ১৯৭১ সালে লড়াইয়ের সময়ে কীভাবে রক্ষা করা হয়েছিল তাজমহলকে?

বিয়েবাড়ির হুল্লোড়ের মাঝে নাবালিকার চিৎকার, কাঁপতে কাঁপতে ভয়ঙ্কর অত্যাচারের বর্ণনা পরিবারকে, ছুটে এল পুলিশ

সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল, কটি বাঁধকে নিয়ন্ত্রণ করবে ভারত

সন্ত্রাসবাদকে শায়েস্তা করতে খোলা হাত, সেনাকে জানিয়ে দিলেন মোদি!

মেনুতে পনির নেই কেন? রাগে বিয়েবাড়িতে বাস ঢুকিয়ে মণ্ডপ ভাঙলেন যুবক, ভয়াবহ পরিণতি ৮ জনের