
সোমবার ০৫ মে ২০২৫
বিভাস ভট্টাচার্য, বহরমপুর : অল্পস্বল্প ভিড়। এদিক ওদিক জটলা। কিছুটা নিচু স্বরে আলাপ আলোচনা। মুখের ছবিতেই স্পষ্ট, 'মেনে নেওয়া যায় না। দাদা হেরে গেল'! বুধবার সকালে এটাই বহরমপুর কংগ্রেস অফিসের সামনের ছবি। এটা যেমন বাইরের দৃশ্য, ভেতরের দৃশ্যটাও কিন্তু খুব একটা আলাদা নয়। সকলের মুখই গম্ভীর। মুখে 'ইন্দ্র পতনের' ছায়া। অধীর চৌধুরী হেরে গেছেন।
অথচ ৪ জুন মঙ্গলবার সকালেও কিন্তু ছবিটা অন্যরকম ছিল। গণনা শুরু হতেই এগিয়ে যান অধীর। মাঝে কিছুটা সময় পিছিয়ে পড়লেও আবার ফেরেন। কিন্তু ভাগীরথীর দিকে সূর্য যতই ঢলেছে, ততই একটু একটু করে বহরমপুরে 'অধীর সূর্য' ডুবতে শুরু করেছে।
'মনে হয় দাদা হেরে যাওয়ার মতো প্রার্থী?' প্রশ্ন করলেন এক কংগ্রেস কর্মী। 'হারলেন কেন?' পাল্টা প্রশ্ন করা হলো তাঁকে। ওই কংগ্রেস কর্মীর উত্তর, 'এই জেলা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। সংখ্যালঘুরা এতদিন দাদাকে ঢেলে ভোট দিয়ে এসেছেন। আবার উল্টোদিকের ভোটও এসেছে। কারণ দাদা কোনও সম্প্রদায়কে নিয়েই আলাদা রাজনীতি করেননি। এবার এমন সমস্ত কথা প্রচারের সময় তৃণমূল এবং বিজেপি বলল যে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট হয়ে গেল।'
রাখা ছিল আবির। অগ্রিম কথা বলাও হয়েছিল ফুলের দোকানে। মালার জন্য। যে রকমটা প্রতিবার হয় আর কি। গত লোকসভা নির্বাচনের কথা মনে করে ওই কর্মী বলছিলেন, 'দেখুন এই ফুল, মিষ্টির মতো জিনিসগুলো দোকানে না বললেও হত। বহরমপুর লোকসভা নির্বাচন মানেই অধীর চৌধুরীর জয়, এটা একটা অভ্যাসের মতোই ছিল। আর দোকানদার রেখেও দিত। কিন্তু ওই বিভাজনের রাজনীতি হয়ে গেল তলায় তলায়। যে ভাবনা লোকের কোনওদিন মাথায় আসেনি, সেই ভাবনাই বলে বলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। না হলে দেখতেন আপনাদেরও আজ ঠেলাঠেলি করেই ভেতরে আসতে হত। অফিসের সামনে থেকে সিঁড়ি, ভরে থাকত আবিরে।'
তিনতলায় হল ঘরের পাশের ঘর থেকে দরজা ঠেলে ঢুকলেন অধীর। 'কিছু বলবেন'? অধীরের প্রশ্ন। ফলাফল এরকম হল কেন? 'পুরো পোলারাইজড ভোট হয়েছে। তাই এই ফল। মঙ্গলবার দিনই তো বললাম।' অধীরের দাবি। কীভাবে আবার এগোবেন, মানে ভবিষ্যতের কী ভাবনাচিন্তা করছেন? 'পরিকল্পনা আবার কী? দেখা যাক।' জানালেন অধীর। নিচে নেমে দেখা গেল অফিসের সামনে সেই অল্পস্বল্প ভিড়টাও আর নেই বললেই চলে।