
সোমবার ০৫ মে ২০২৫
পল্লবী ঘোষ, বহরমপুর: ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপেক্ষা করে ১২ ঘণ্টা রোদে পুড়ে, ঘুরে ঘুরে প্রচার। দীর্ঘ দগ্ধ দিনেও বহরমপুরের "চৌধুরী"কে ঘিরে বরাবরের মতো জনতার উন্মাদনা তুঙ্গে। তবে এবারে ২৫ বছরের সাংসদের ভিন্ন রূপও নজর এড়াচ্ছে না কারও। নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে পড়ে কখনও মারতে তেড়ে যাচ্ছেন, কখনও বা ঘাড় ধাক্কা দিচ্ছেন, কখনও সরাসরি কষিয়ে থাপ্পড়। প্রচারের মাঝে থানাতেও হাজিরা দিতে হয়েছে তাঁকে। কেন ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ হারাচ্ছেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী?
অধীর জানালেন, "মেজাজ হারাচ্ছি না। শান্তই আছি। যে ফুটেজটা ছড়িয়েছে, সেটা ভুল বার্তা দিয়েছে। ওই ছেলেটি আমার পরিচিত। অশান্তি করছিল। ওকে থামাতে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র। শাসন করছিলাম।"
এদিকে রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হারিয়ে ফেলার ভয় পেয়েছেন অধীর চৌধুরী। সেকারণেই রাস্তায় পা রাখা মাত্র বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনাতেও তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি সহ বিরোধীদের মতে, এগুলো অধীর চৌধুরীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। তবে কি সত্যিই তাঁর আত্মবিশ্বাস কমেছে? সেই জল্পনাও ভাঙলেন স্বয়ং কংগ্রেস নেতা। অধীরের কথায়, "আমার আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই। আমি তো একজন মানুষ। বারবার বিরক্ত করলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হয়। আমিও তাই দেখিয়েছি।"
শুধু কি বিক্ষোভের মুখেই তেতে উঠছেন অধীর! সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও মেজাজ হারাতে দেখা গেল তাঁকে। সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন বাদবাকি প্রশ্ন।
পোড়খাওয়া রাজনীতিক অধীরের ক্রুদ্ধ হওয়ার নেপথ্যে শুধুই কি বিজেপি আর তৃণমূলের বিক্ষোভ-কৌশল? বহরমপুরের হাওয়া তেমনটা বলছে না। টানা পাঁচবার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর জন্য এবারের লড়াইটা বেশ কঠিন। ২০১৪ সালের পর ২০১৯ সালে ভোটের ব্যবধান অনেকটা কমেছে। প্রায় ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ভোট থেকে ব্যবধান কমে মাত্র ৮০ হাজার। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অধীর-গড়েই ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। একুশ সালে বহরমপুর বিধানসভায় প্রথম বিজেপি, দ্বিতীয় তৃণমূল, তৃতীয় স্থানে কংগ্রেস।
অন্যদিকে এই প্রথমবার বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিরোধী দল তৃণমূল সংখ্যালঘু মুখকে প্রার্থী করেছে। তার ওপর তিনি তারকা ক্রিকেটার। ক"দিনের মধ্যে ইউসুফ পাঠান ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। অন্যদিকে বিজেপির নির্মল সাহা। শিক্ষিত, মার্জিত এবং গরিবের "ডাক্তার" প্রার্থী হওয়ার পর, তাঁকে ঘিরেও সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো। এতদিন তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা লড়েছেন, তাঁদের ঘিরে বহরমপুরবাসীর আগ্রহ ততটা ছিল না। এবারের লোকসভা ভোটে বহরমপুরের তিনজন প্রার্থীই নজরকাড়া। তাতেই আরও চাপ বেড়েছে কংগ্রেস নেতার। শেষপর্যন্ত লড়াই কতটা জোরদার হল, তার জন্য নজর থাকবে ৪ জুনে।