আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ জয়ের পর তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন প্রাক্তন অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

রবিবার ডি.ওয়াই. পাটিল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো মহিলাদের একদিনের বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। আর মহিলা ক্রিকেটারদের খেলার তো বটেই, রবিচন্দ্রন অশ্বিন প্রশংসা করলেন তাঁদের আরও এক উদ্যোগের।

মহিলা ক্রিকেটারদের এই উদ্যোগের প্রসঙ্গে অশ্বিনের বক্তব্য ছিল একেবারে আলাদা। তিনি জানালেন, ‘মহিলা ক্রিকেটাররা যা করল, পুরুষ দল কখনও করেনি।’

অশ্বিন প্রশংসা করেছেন হরমনপ্রীত কৌর ও তাঁর সতীর্থদের এক অনন্য উদ্যোগের। নিজেদের সাফল্যের মুহূর্তে ট্রফি নিয়ে ভিকট্রি ল্যাপ দেওয়ার সময় হরমনপ্রীতরা সম্মান জানিয়েছিলেন ভারতের মহিলা ক্রিকেটের পথিকৃৎদের, মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী ও অঞ্জুম চোপড়াকে।

যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মহিলা ক্রিকেটের পাশে থেকেছেন, উন্নতির জন্য লড়াই করেছেন। এঁরা তিনজনই ফাইনাল ম্যাচে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় ছিলেন। ট্রফি জয়ের পর সম্প্রচারকারী চ্যানেলের হয়ে মাঠে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় ছিলেন তাঁরা।

ভিকট্রি ল্যাপ দেওয়ার সময় হরমনপ্রীতদের সঙ্গে দেখা হয় ঝুলন, মিতালি রাজ, অঞ্জুম চোপড়াদের। হারমানপ্রীতরা তাঁদের হাতে তুলে দেন ট্রফি। একসঙ্গে নাচতে দেখা যায়, ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটারদের লেজেন্ডরা ট্রফি নিয়ে সেলিব্রেশন করেন।

ট্রফি নিয়ে তাঁদের চোখে জলও দেখা গিয়েছে। যে মুহূর্ত ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অশ্বিন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, ‘এই জয় কেবল এক ম্যাচের নয়। ২০১৬-১৭ সালে হরমনপ্রীতের সেই ঐতিহাসিক ইনিংসের পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরাজয়ের বেদনা ছিল। তখন দলের অংশ ছিলেন ঝুলন গোস্বামী ও মিতালি রাজ। আর এবার, দেখুন, ট্রফিটা তাঁরা তুলে দিলেন মিতালির হাতে। আমি ভারতীয় মহিলা দলকে স্যালুট জানাই। পুরুষ দল কিন্তু কখনও এমন কিছু করেনি।’

অশ্বিনের কথাগুলো ছুঁয়ে গেছে অসংখ্য ক্রিকেটপ্রেমীর মন। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় মিডিয়ার সামনে বলি যে পূর্বসূরিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে, কিন্তু বাস্তবে সেটা খুব কম দেখা যায়। মহিলা দল কথায় নয়, কাজে তা দেখিয়েছে। ওদের এই আচরণে যে আন্তরিকতা ও কৃতজ্ঞতা ছিল, সেটাই অনন্য।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সাধারণত সবাই নিজের সময়ের দলকে বেশি বড় করে দেখায়, কিন্তু ওরা দেখিয়ে দিল, প্রকৃত শ্রদ্ধা কাকে বলে।’ ঝুলন গোস্বামীর কাছে এই রাতটা ছিল আরও আবেগপূর্ণ।

দীর্ঘ দু'দশকের কেরিয়ারে যে বিশ্বকাপ হাতে তোলা তাঁর স্বপ্ন ছিল, সেই ট্রফিটিই তাঁর হাতে তুলে দিলেন জুনিয়র সতীর্থরা। চোখের জলে ভেসে যান প্রাক্তন পেসার।

পরে স্টার স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঝুলন জানান, এই মুহূর্তের পেছনে আছে এক অজানা প্রতিশ্রুতি, ‘বিশ্বকাপের আগে ওরা আমার ঘরে এসেছিল রাতে। বলেছিল, ‘ঝুলুদি, আপনি হয়তো থাকবেন না, কিন্তু আমরা আপনার জন্য জিতব।’ আর আজ ওরা সত্যিই তা করল। তাই আবেগ সামলাতে পারিনি।’

নভি মুম্বইয়ের এই ঐতিহাসিক জয় কেবল এক ট্রফি নয়, এটি প্রায় দুই দশকের অপেক্ষা, চোখের জল আর স্বপ্নের পরিপূর্ণতা। ২০০৫ ও ২০১৭ সালের হার মুছে দিয়ে ভারতীয় মহিলা দল অবশেষে ইতিহাস তৈরি করল, শুরু হল এক নতুন স্বর্ণযুগের।