আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাত্র ১৭ বছর বয়সে জীবনের সবচেয়ে বড় জয় অর্জন করে নিলেন উন্নতি হুডা। বৃহস্পতিবার চায়না ওপেন সুপার হাজারের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে দু'বারের অলিম্পিক পদকজয়ী পিভি সিন্ধুকে হারিয়ে হইচই ফেলে দিলেন হরিয়ানার তরুণী। ম্যাচ শেষে ক্লান্ত নিঃশ্বাসে দাঁড়িয়ে থাকা উন্নতির মুখে তখনও হাসি—একটি স্বপ্ন সত্যি হওয়ার তৃপ্তি লুকোতে পারছিল না। “আমি ভাবিইনি আজ জিতব,” ম্যাচ শেষে অকপট উন্নতি। কিন্তু ঠিক সেটাই ঘটেছে—তিন গেমের রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ে সিন্ধুকে হারিয়ে চমকে দিলেন গোটা ব্যাডমিন্টন মহলকে। এক সময় যিনি সিন্ধুর খেলা দেখে স্ম্যাশ অনুকরণ করতেন, তিনিই কোর্টে হারালেন নিজের অনুপ্রেরণাকে। ২০২২ সালে উবের কাপে প্রথমবার সিন্ধুর সঙ্গে সফরে গিয়েছিলেন উন্নতি, সেবার কোনও ম্যাচ খেলেননি।

তবে সিন্ধুর পাশে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সেই অভিজ্ঞতার ফসলই যেন বৃহস্পতিবার ফলল। ম্যাচের স্কোরলাইন: ২১-১৬, ১৯-২১, ২১-১৩। র‍্যালি-নির্ভর এই ম্যাচে একাধিক বিতর্কিত লাইন কল, তীব্র গতি, এবং দারুণ প্রত্যাবর্তনের ছাপ ছিল। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত এল শেষ গেমে। ১৭-১৩ এগিয়ে থেকে উন্নতি একের পর এক শার্প উইনার মেরে ম্যাচ নিয়ে নিলেন নিজের দখলে। জেতার পর উন্নতির চোখে মুখে দেখা যাচ্ছিল পরিণত হওয়ার ছাপ। উন্নতির যাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ৮ বছর বয়সে। ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হরিয়ানার রোহতকে জন্ম, বাবা উপকার হুডা নিজেই একজন ব্যাডমিন্টন প্রেমী ছিলেন এবং মেয়েকে খেলায় অনুপ্রাণিত করেন। স্থানীয় অ্যাকাডেমিতে নিজের থেকে বয়সে বড় ছেলেদের হারিয়ে নজরে আসেন উন্নতি। মেয়ের প্রতিভা দেখে উপকারবাবু নিজের চাকরি ছেড়ে দেন, যাতে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে মেয়েকে নিয়ে যেতে পারেন।

২০১৮-তে অনূর্ধ্ব-১৩ জাতীয় প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ, ২০১৯-এ অনূর্ধ্ব-১৫ বিভাগে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। কোচ প্রবেশ কুমারের তত্ত্বাবধানে দিনের পর দিন ১৬০০ ড্রপ শট অনুশীলন করতেন তিনি। এই নিখুঁত প্রস্তুতির ফল পাওয়া যায় ২০২২ সালে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ওড়িশা ওপেন জিতে ইতিহাস গড়েন তিনি। সবচেয়ে কমবয়সি ভারতীয় হিসেবে BWF সুপার ১০০ শিরোপা জয়। ওই বছরেই ব্যাডমিন্টন এশিয়া জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে (U-17) রূপো জিতে প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসেবে ফাইনালে পৌঁছন। ২০২৩ সালেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত ছিল উন্নতির। আবু ধাবি মাস্টার্স ও ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জে চ্যাম্পিয়ন হন, উঠে আসেন বিশ্বের শীর্ষ ১০০ র‌্যাঙ্কিংয়ে। বর্তমানে উন্নতির র‍্যাঙ্কিং ৩৫। চলতি বছর তাইপেই ওপেন (সুপার ৩০০) এর সেমিফাইনালেও খেলেছেন।

যাঁরা ভাবছেন, ভারতের পরবর্তী সিন্ধু বা সাইনা কোথা থেকে আসবেন—উত্তরটা হয়তো হরিয়ানারই মাটিতে পাওয়া গেল। তবে প্রাক্তন বিশ্ব চ্য়াম্পিয়ন এবং দু'বারের অলিম্পিক পদকজয়ী পিভি সিন্ধুর সময়টা ভাল যাচ্ছে না। ২০২৫ সালের জাপান ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে গিয়েছেন হায়দরাবাদি তারকা। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগী সিম উ জিনের কাছে হেরে যান সিন্ধু। বিশ্বের ক্রমতালিকায় ভারতের তারকা শাটলার ১৬ নম্বরে। স্ট্রেট গেমে সিন্ধুকে হারান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগী। খেলার ফল ২১-১৫, ২১-১৪। দক্ষিণ কোরিয়ার সিম উ জিন ১৪ নম্বর। জুনে ইন্দোনেশিয়া ওপেনের পরে এটাই ছিল সিন্ধুর প্রথম ম্যাচ। সিমের সঙ্গে সিন্ধুর সাক্ষাৎ হয়েছে চারবার। এটাই ছিল হায়দরাবাদের তারকার প্রথম পরাজয়।