আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১২ বছর পর ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ হার ভারতের। মাত্র তিন দিনেই শেষ পুনে টেস্ট। শনিবার দ্বিতীয় টেস্ট ১১৩ রানে জিতল নিউজিল্যান্ড। বেঙ্গালুরুর পর পুনে। ব্যাক টু ব্যাক টেস্ট জিতে ২-০ তে সিরিজ পকেটে পুরে নিল কিউয়িরা। দুই ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের খেসারত দিতে হল ভারতকে। ৪৩৩১ দিন পর ঘরের মাঠে লজ্জার হারের সাক্ষী থাকলেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৩৫৯ রান। কিন্তু ২৪৫ রানে শেষ টিম ইন্ডিয়ার ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্রথম ভারতের মাটিতে টিম ইন্ডিয়াকে হারাল নিউজিল্যান্ড।

লাল বলের ক্রিকেটে অধিনায়ক বদলেই ভাগ্য ফিরল কিউয়িদের। নেতা হিসেবে অভিষেক টেস্ট জিতলেন টম লাথাম। দ্বিতীয় টেস্টের আসল নায়ক মিচেল স্যান্টনার। দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১৩ উইকেট সংগ্রহ। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটের পর, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের সেরা কিউয়ি স্পিনার। ২০১২ সালে অ্যালিস্টার কুকের নেতৃত্বে ভারতে ২-১ এ সিরিজ জেতে ইংল্যান্ড। তারপর বিগত এক দশকে লাল বলের ক্রিকেটে ঘরের মাঠে অপরাজেয় তকমা ধরে রাখে টিম ইন্ডিয়া। শ্রীলঙ্কার কাছে টেস্ট সিরিজে দুরমুশ হয়ে ভারতে আন্ডারডগ হিসেবে এসেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু পরিকল্পিত ক্রিকেটে দুই টেস্টেই সব বিভাগে রোহিতদের মাত দেন লাথামরা। জোড়া হার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পথ কিছুটা হলেও কঠিন করল রোহিতদের। ঘরের মাঠে কিউয়িদের হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে চড়ার আগেই ফাইনালের টিকিট হাতে পেয়ে যেতেন রোহিতরা।‌ কিন্তু সিরিজ হেরে বসায়, বাকি ছয় টেস্টের মধ্যে অন্তত তিনটে জিততেই হবে ভারতকে। অর্থাৎ, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে যদি রোহিতরা সিরিজের শেষ টেস্ট জিতেও যায়, অস্ট্রেলিয়ায় আরও দুটো জিততে হবে। 

পুনেতে দ্বিতীয় দিনের শেষে নিউজিল্যান্ডের লিড ছিল ৩০১ রান। শনিবার বেশি রান যোগ করতে পারেনি কিউয়ি ব্যাটাররা‌। রবীন্দ্র জাদেজার দাপটে ২৫৫ রানে শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৩৫৯ রান। রোহিত শর্মা ব্যর্থ হলেও যেভাবে খেলছিলেন যশস্বী জয়েসওয়াল এবং শুভমন গিল, একটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল। অন্তত মনে হয়েছিল লড়াই করবে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু যশস্বী আউট হতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল ভারতের ব্যাটিং। ৬৫ বলে ৭৭ করেন যশস্বী। বাকিরা ডাহা ব্যর্থ। মিচেল স্যান্টনারের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। জোড়া ইনিংসে ফ্লপ বিরাট কোহলি। শেষদিকে একাই কিছুটা লড়াই চালান রবীন্দ্র জাদেজা। ৪২ করে আউট হন। ছয় উইকেট নেন স্যান্টনার। ঘরের মাঠে কিউয়ি স্পিনারের কাছে আত্মসমর্পণ ভারতের।

তৃতীয় দিন চায়ের বিরতির আগেই ৭ উইকেট হারায় ভারত। হার শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। অষ্টম উইকেটে ৩৯ রান যোগ করে জাদেজা, অশ্বিন জুটি। কিন্তু ম্যাচ বাঁচানো ভারতের স্পিন জুটির পক্ষে সম্ভব ছিল না। ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৮৭ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। দলকে জেতায় শচীন তেন্ডুলকর এবং বীরেন্দ্র শেহবাগ জুটি। তার পুনরাবৃত্তি হল না পুনেতে। প্রথম ইনিংসে ২৫৯ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ৭ উইকেট নেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ৩ উইকেট রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। কিন্তু তার ফায়দা তুলতে পারেনি ভারত। ১৫৬ রানে টিম ইন্ডিয়ার প্রথম ইনিংস শেষ হয়। প্রথম ইনিংসের শেষে ১০৩ রানে এগিয়ে ছিল কিউয়িরা। তাবড় তাবড় ব্যাটারে সমৃদ্ধ ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করা হয়েছিল। কিন্তু পারলেন না রোহিত, কোহলিরা।‌ নিজেদের মাঠেই লজ্জার হার। একসময় কথিত ছিল, 'ঘরের মাঠে বাঘ টিম ইন্ডিয়া।' এটা বোধহয় আর বলা যাবে না। কিউয়িরা চোখে আঙুল দিয়ে সেটা দেখিয়ে দিল।