কৃশানু মজুমদার: অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে ভারতের মাটিতে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও এদেশে। হাসিনা উত্তরে। আর নাজমুল হাসান শান্তর দল দক্ষিণে। 

কিন্তু ভারতের মাটিতে থাকলেও শাকিব আল হাসানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে না বাংলাদেশের গদিচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর।  

বদলে গিয়েছে পদ্মাপারের পরিস্থিতি। রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে সে দেশে। কিন্তু স্বস্তি পুরোদস্তুর ফেরেনি। এখনও সে দেশে অস্বস্তির বাতাবরণ। 
রাজনৈতিক পরিবর্তনের জের পড়েছে সে দেশের ক্রিকেট বোর্ডেও। নতুন মুখের ভিড় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে।  

বাইশ গজে মুখোমুখি দুই প্রতিবেশি দেশ। ক্রিকেট মাঠে ভারত ও বাংলাদেশ দ্বৈরথ মানে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে গনগনে ব্যাপারটা থাকে, এ বার তা উধাও।
দুই দেশের ক্রিকেট-যুদ্ধের আগে তাসকিনের হাতে ধোনির কাটা মুণ্ডু দেখা গিয়েছিল। মুস্তাফিজুর রহমানের কাটারে বিধ্বস্ত ভারতীয় দলকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করা হয়েছিল। তা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল এদেশ-ওদেশ। 

কিন্তু এবারই অদ্ভুত ভাবে শান্ত বাংলাদেশ। জনমানসে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা অনেকাংশে কমে গিয়েছে।  এমনকী পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে বাবর আজমদের দুরমুশ করে আসার পরেও ক্রিকেট নিয়ে উৎসাহ ফেরেনি সে দেশে। 

বৃহস্পতিবার থেকে চেন্নাইয়ে ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ শুরু হচ্ছে তা সেদেশের অনেকের কাছেই অজ্ঞাত। ক্রিকেটের সেনসেক্স হঠাৎই কমে গিয়েছে বাংলাদেশে। আশাবাদীরা মনে করছেন, বল গড়ালেই ক্রিকেট পাগলদের দৃষ্টি ঘুরে যাবে। তখন হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাবে ক্রিকেট-সংক্রান্ত একাধিক সব পোস্ট। কী হবে, তার উত্তর দেবে সময়। 

তবে ভারত সফরের আগে সে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য নাজমুল হাসান শান্তদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ শুরুর আগেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশের দৌরাত্ম্য দেশের মানুষের শিরঃপীড়া কমাতে পারে। শেষ বার পিঙ্ক বল টেস্ট খেলতে ভারতের মাটিতে এসেছিল বাংলাদেশ। তার পর কেটে গিয়েছে চার-চারটে বছর। টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য শান্তরা ফের ভারতের মাটিতে। প্রথম টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার কিন্তু আশাবাদী। আজকাল ডিজিটাল-কে তিনি বলেন, ''এবারের প্রস্তুতি আগের (পিঙ্ক বল টেস্টের সময়ে) থেকে অনেক ভাল।'' 

অতীতে ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ মানেই উত্তেজনা-আবেগের অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে।  এবার টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানকে হারানোয় আত্মবিশ্বাস খেলা করছে বাংলাদেশের সাজঘরে। ক্রিকেটের সবুজ গালচেয় এমন বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে আগে কে কবে দেখেছেন! বাশার বলছেন, ''আগে বাংলাদেশ খুব একটা টেস্ট ক্রিকেট খেলত না। একটা সিরিজের সঙ্গে আরেকটি সিরিজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল অনেকটাই।'' 

ধারে ও ভারে গৌতম গম্ভীরের ভারত অনেকটাই শক্তিশালী। তার উপরে রোহিত শর্মারা টেস্ট সিরিজ খেলতে নামছেন দেশের মাটিতেই। সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহশিকার করতে আসার অবস্থা বাংলাদেশের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী হাবিবুল বাশার বলছেন, ''আমরা জানি ভারত আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। এটা জেনেই আমরা খেলতে এসেছি।'' 

রাতারাতি বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই ভোলবদলের কারণ কী? ক্রিকেটমহলে একটা কথা প্রচলিত ছিল, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভাল খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু পাঁচ দিনের ফরম্যাটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে রক্তাল্পতা রয়েছে। পাকিস্তানকে হারানোর পরে এ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যারা অকুতোভয়। বাশার ব্যাখ্যা করে বলছেন, ''আগে আমাদের স্পিনাররা ভাল বল করত। পাকিস্তানে আমাদের পেসাররাও দুর্দান্ত বল করেছে। সেই সঙ্গে ব্যাটাররাও ভাল খেলেছে।'' সব মিলিয়ে ক্রিকেট মাঠে পাওয়া গিয়েছে নতুন  বাংলাদেশ। 

লক্ষ্মীবার থেকেই শুরু হচ্ছে টেস্ট ম্যাচ। সব অর্থেই দুই মেরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এবং শেখ হাসিনা।